যশোরে চাকুবাজদের দৌরাত্ম্য ফের বৃদ্ধি : এক মাসে জখম ১৫

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে চাকুবাজদের দৌরাত্ম্য ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে চাকুবাজদের হাতে লোকজন জখম হচ্ছেন।

গত এক মাসে চাকুবাজদের হাতে অন্তত ১৫ জন জখম হয়েছেন। তবে পুলিশ প্রশাসন চাকুবাজদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির অভিযোগ মানতে নারাজ। পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলছে, মানুষের জানমাল রক্ষার জন্য তারা রাতে টহল বাড়িয়ে দিয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে চাকুবাজদের দৌরাত্ম্য চরমে ছিলো। যশোর শহরের বিভিন্ন মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতারা তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এসব চাকুবাজ সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারীকে ব্যবহার করতেন। স্থানীয় ওই রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ের কারণে তুচ্ছ ঘটনায় চাকুবাজরা লোকজনকে চাকু দিয়ে জখম করতে পিছপা হতো না। তবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাকুবাজদের অধিকাংশ আত্মগোপন করে। কিন্তু পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার সুযোগে ঘাপটি মেরে থাকা চাকুবাজ ও ছিনতাইকারীরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ছিনতাইসহ বিভিন্ন ঘটনায় চাকুবাজ দুর্বৃত্তদের হাতে প্রায়ই লোকজন জখম হচ্ছেন। গত এক মাসে বিভিন্ন ঘটনায় চাকুবাজদের হাতে অন্তত ১৫ জন জখম হয়েছেন।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে যশোর-মাগুরা সড়কের নোঙরপুর মাজারের কাছে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম হন রায়হান নামে এক যুবক। এ সময় তিনি বাইসাইকেলে যশোর শহর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। রায়হান সদর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের ফসিয়ার রহমানের ছেলে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকালে নাজির শংকরপুর হাজারী রেলগেট এলাকায় জমি নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে জখম হন এনামুল কবির নামে এক ব্যক্তি।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরের রেলগেট ইসমাইল কলোনি তেঁতুলতলা এলাকায় নিজ বাড়িতে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও কুদরতের ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম হন ৬ মামলার আসামি সন্ত্রাসী সম্রাট। জমি ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বে তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
১ ফেব্রুয়ারি রাতে শহরতলীর বিরামপুরের আফজাল মার্কেটের সামনে পূর্ব বিরোধের জের ধরে পাল্টাপাল্টি ছুরিকাঘাতে ৩ যুবক জখম হন। এরা হলেন, একই এলাকার তরিকুল ইসলামের ছেলে তাসনিম, বুলু শেখের ছেলে আকাশ ও হিরু মিয়ার ছেলে মামুন।
২৮ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে যশোর জিলা স্কুলের সামনে অজ্ঞাত পরিচয় ৩/৪ জন দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে গুরুতর জখম হন চুড়িপট্টির ব্যবসায়ী মৃত্যুঞ্জয় সাহা। ওই সময় তিনি রিকশায় চড়ে ষষ্ঠীতলায় যাচ্ছিলেন।
২২ জানুয়ারি সকালে শহরের নাজির শংকরপুর চাতালের মোড়ে অজ্ঞাত পরিচয় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে জখম হন আব্দুল জলিল নামে এক ব্যক্তি। তিনি পূর্ব বারান্দীপাড়ার কুতুব উদ্দিনের ছেলে।
একইদিন রাত ৮টার দিকে শহরতলীর খোলাডাঙ্গায় জায়গাজমি নিয়ে দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে দুই ভাই ইসমাইল ও ইসরাইল জখম হন।
গত ২৪ জানুয়ারি সকালে পুলিশ লাইন্স টালিখোলা মসজিদের পাশে টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর জখম হন আল আমিন বিশ্বাস নামে এক যুবক। তিনি একই এলাকার মৃত মুসা বিশ্বাসের ছেলে।
১৩ জানুয়ারি দুপুরে শহরের নাজির শংকরপুর সাদেক দারোগার মোড়ে মোবাইল ফোনসেট বিক্রি করতে এসে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে জখম হন গাজী শামীম নামে একজন ট্রাকচালক। তার বাড়ি বকচর এলাকায়।
১২ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে শহরতলীর বিরামপুর গাবতলায় টাকা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে বাড়িওয়ালা রফিকুল ইসলামের ছুরিকাঘাতে ভাড়াটিয়া সৌদি প্রবাসী আব্দুল করিম জখম হন।
১৬ জানুয়ারি গভীর রাতে রেলগেট এলাকায় মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদ করায় রাকিব ও হৃদয় নামে দুই জনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। জিলকদ নামে এক যুবক তাদেরকে ছুরিকাঘাত করেন।
চাকুবাজদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেলেও বিষয়টি মানতে নারাজ পুলিশ প্রশাসন। জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, চাকুবাজাদের দৌরাত্ম বৃদ্ধি পেয়েছে এ তথ্য সঠিক নয়। যেখানে কোনো ঘটনা ঘটছে, পুলিশ সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছে। মামলাও গ্রহণ করা হচ্ছে। রাতে পুলিশের টহল বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ১৪টি টিম টহল দিচ্ছে।