দাম বেশি দিলে মিলছে সয়াবিন তেল, চাল ডাল মাংসের দাম কমেনি

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ।। যশোরের বড় বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট চলছে। তবে নির্ধারিত দামের বেশি টাকা দিলে দোকানিরা বিক্রি করছেন। এদিকে বাজারে সব ধরনের ডাল ও মাংসের দাম বাড়ানোর পর আর কমেনি। কমেনি আমদানির পরও চালের দাম। তবে আলু, পেঁয়াজ ও সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে দামও যথেষ্ট কম।

ভোক্তাদের অভিমত রোজাকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা আগেভাগে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাদের দাবি রমজান মাস পর্যন্ত অপেক্ষা না করে এখনই বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিতে হবে।
শুক্রবার বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাড়তি টাকা দিলে দোকানিরা বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন। ক্রেতা খালধার রোড বারান্দিপাড়ার বাসিন্দা বিধান সাহা ৫ লিটার বোতলের রুপচাঁদা সয়াবিন তেল কিনেছেন ৮৭৫ টাকায়। অথচ বোতলের গায়ে দাম লেখা আছে ৮৫২ টাকা। ক্রেতা বলেন, বাড়তি টাকা না দিলে দোকানিরা বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন না। দোকানিদের অভিযোগ, বোতলজাত সয়াবিন তেল নিতে হলে কোম্পানির চাল, সরিষার তেল মরিচের গুঁড়া এসব কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে।

তবে যশোরে রুপচাঁদা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান শাকিল দোকানিদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জোর করা নয়, তাদের কোম্পানির অন্যান্য সামগ্রী দোকানিদের বিক্রি করার জন্য অনুরোধ করা হয়। সেক্ষেত্রে দোকানিদের চাহিদামত বিভিন্ন পণ্য দেওয়া হয়। আর কোম্পানি থেকে যশোরে বোতলজাত সয়াবিন তেল চাহিদামত আসছে না। যা আসছে তা দিয়ে বাজারের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না।

বড় বাজারের খুচরা ভোজ্যতেল বিক্রেতা রবি ব্যানার্জি জানান, খোলা সয়াবিন তেলের দাম গত সপ্তাহের থেকে ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়। পাইকারি বিক্রেতা ‘কু-ু অয়েল মিল’ এর বিশ^জিত জানান, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের আমদানি বেড়েছে। তিনি এদিন পাইকারি দর প্রতি কেজি ১৮৮ টাকা করে বিক্রি করেছেন।

এদিকে বড় বাজারে গত সপ্তাহে সব ধরনের ডালের দাম বাড়ার পর আর কমেনি। খেসারির ডালে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, ছোলার ডালে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, চিকন দানার মসুর ডালে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, বুটের ডাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা ও ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। বড় বাজার কাঠেরপুলেও মাংস বিক্রেতারা গত সপ্তাহে গরুর মাংসের কেজিতে ৫০ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২শ টাকা।

শুক্রবার বড় বাজার চালবাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানির পরও বাজারে বাড়তি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। বাংলামতি চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি মানভেদে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা, মিনিকেট চাল ৬৮ থেকে ৭২ টাকা, সুবললতা চাল ৭০ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, বিআর-৬৩ চাল ৭২ থেকে ৭৪ টাকা, স্বর্ণা চাল ৫২ টাকা ও হীরা চাল ৪৯ টাকা। যশোর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার বিশ^াস জানান,চাল আমদানি না হলে সরু চালের দাম আরও বেড়ে যেত।

বাজারে আলু, পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ থাকায় দাম সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। শুক্রবার খুচরা বিক্রেতা মো. হাসান জানান তিনি প্রতি কেজি আলু ২৫ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ টাকা, আদা ১০০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এইচএম রোডের পাইকারি ব্যবসায়ী ‘নিউ মা ভা-ার’ এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী বিষ্ণুপদ সাহা জানান,তিনি পাইকারি দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা ও আলু ১৭ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনি আরও বলেন, আগামী ফাল্গুন মাস পর্যন্ত বাজারে আলু ও পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে আর দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে তিনি আশা করেন।

একই অবস্থা সবজির ক্ষেত্রেও। বড় বাজারে এখন প্রচুর আমদানি হচ্ছে সবজি। শুক্রবার ফুলকপি, বাঁধাকপি ও মুলা বিক্রি হয়েছে ১০ টাকা করে কেজি দরে। পেঁয়াজের কালি ও শিম বিক্রি হয়েছে ২০ টাকা করে কেজি। বেগুন ও গাজর বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা করে কেজি। লাউ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

ভালোমানের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা। খুচরা বিক্রেতা মো. মজনু জানান, বাজারে সবজির সরবরাহ প্রচুর। এ কারণে তাদের বিক্রি খুব একটা ভালো হচ্ছে না।

বড় বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা মাছ বাজার রোডের ‘মনিরামপুর ভা-ার’ এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন জানান, শুক্রবার তিনি চাষির বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ওলকপি ৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তাছাড়া টমেটো বিক্রি করেছেন ১২ থেকে ১৫ টাকা, শিম ১০ টাকা ও বেগুন বিক্রি করেছেন ২৪ টাকায়। তিনি আরও জানান, দূর-দূরান্ত থেকে সবজি বড় বাজারে এনে বিক্রি করে তাদের পরিবহন খরচও ঊঠছে না।

এদিকে রোজার আগে বাজারে নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসনীম শুক্রবার লোকসমাজকে জানান, তারা রোজার আগেই বাজার তদারকি জোরদার করবেন।