থাকছে না তদবির, ৩ কমিটির সিদ্ধান্তে হবে নিয়োগ-বদলি

0
ছবি: সংগৃহীত।

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তার উপরের কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার (এসপি), ডিআইজি ও তার উপরের কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, সমপর্যায়ের অন্যান্য ও তার উপরের পদে নিয়োগ ও বদলিতে তদবির ঠেকাতে তিন কমিটি করে দিয়েছে সরকার। এসব পদে নিয়োগ-বদলি ছাড়াও শৃঙ্খলার বিষয়ে কমিটির পরামর্শ নিতে হবে।

গত ৮ জানুয়ারি তিনটি কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর মধ্যে প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তার উপরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসপি, ডিআইজি ও তদূর্ধ্ব স্তরে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কমিটি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, সমপর্যায়ের অন্যান্য ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত পরামর্শ দিতে গঠন করা হয়েছে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়োগ ও বদলিতে তদবিরের প্রসঙ্গটি ঘুরেফিরে বারবার আসে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে যাতে বিষয়টিতে স্বচ্ছতা থাকে সেজন্য সরকার এ কমিটি করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে তদবিরের সুযোগ কম থাকবে।

প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব ও তার উপরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দিতে ছয় সদস্যের ‘জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

কমিটির সভাপতি করা হয়েছে অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব। কমিটির সদস্যসচিব হলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

কার্যপরিধিতে বলা হয়, কমিটি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ যুগ্মসচিব ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বদলি, নিয়োগ ও শৃঙ্খলার বিষয়ে পরামর্শ দেবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা করবে।

কমিটি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে তথ্য চাইতে পারবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে সভাপতি করে ৭ সদস্যের ‘আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শক। কমিটির সদস্যসচিব হলেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, সরকার পুলিশের সহযোগী বাহিনীতে জেলা পুলিশের এসপি, ডিআইজি ও তদূর্ধ্ব স্তরে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য এ কমিটি গঠন করেছে।

কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়, কমিটি সংশ্লিষ্ট স্তরের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা করবে। কমিটি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে তথ্য চাইতে পারবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, সমপর্যায়ের অন্যান্য ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাসংক্রান্ত পরামর্শ দিতে পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি করা হয়েছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি–সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান ও পররাষ্ট্রসচিব।

কমিটিতে সদস্যসচিব থাকবেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, সমপর্যায়ের অন্যান্য ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি গঠন করেছে।

কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কমিটি মহাপরিচালক, সমপর্যায়ের অন্যান্য ও তদূর্ধ্ব পদে কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা করবে। কমিটি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে তথ্য চাইতে পারবে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনপ্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসনে নিয়োগ ও বদলিতে তদবিরের বিষয়টি নতুন নয়। এটি নিয়ে নানা সময়েই আলোচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিতে বলছেন। মূলত নিয়োগ-বদলিতে এ তদবির ঠেকাতেই তিনটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তদবিরের মাধ্যমে নিয়োগ বা বদলি হলে দেখা যায়— দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাকে পাশ কাটিয়ে কম দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তা সুযোগ পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সরকারেরও ক্ষতি হয়। কমিটি করার মধ্য দিয়ে এটির সুযোগ কমই থাকবে। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে নিয়োগ বা বদলিতে কমিটির সদস্যরা যাচাই-বাছাই করবেন।

তবে কমিটির পরামর্শ নিতে গিয়ে নিয়োগ-বদলির গতি কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিয়োগ ও বদলিতে কমিটির পরামর্শ নেওয়ার অর্থ হলো এ ক্ষেত্রে নতুন করে আরও একটি ধাপ যুক্ত হওয়া। এর মাধ্যমে নিয়োগ ও বদলির গতি কিছুটা কমতে পারে।

নিয়োগ ও পদায়নে তদবির একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, যোগ্য ও দক্ষদের নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতি দিতে হবে। বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতি যাতে না হয় সেটিরও খেয়াল রাখতে হবে।

এগুলো নিশ্চিত করা গেলে জনগণ ও সেবাপ্রত্যাশীরা এর সুফল পাবেন বলেও মনে করেন তিনি।