স্ত্রীসহ স্বপন ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

0

 ১৯ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ জমা, ৪০ কোটি টাকা উত্তোলন

মীর মঈন হোসেন মুসা ।। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরে আলাদা ২টি মামলা হয়েছে। ঢাকাস্থ দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম ওই দম্পতির বিরুদ্ধে ১টি এবং এককভাবে স্বপন ভট্টাচার্য্যরে বিরুদ্ধে আর একটি মামলা করেছেন একই কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল-আমিন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল-আমিন।
একক আসামির একটি মামলায় সাবেক স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ২ কোটি ৪৮ লাখ ৭১ হাজার ১৫১ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনসহ ভোগদখল এবং নিজ নামে ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৪ টাকা জমা ও ৪০ কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৪ টাকা উত্তোলনসহ অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোাগ আনা হয়েছে। ওই মামলায় দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন উল্লেখ করেছেন, আসামি স্বপন ভট্টাচার্য্য যশোর শহরের লালদীঘির পূর্বপাড়স্থ যোগেন্দ্রনাথ রোড ও মনিরামপুর উপজেলার পারলা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। অনুসন্ধানকালে আসামি স্বপন ভট্টাচার্য্যরে ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ এবং ব্যবসায়িক পূঁজি, আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার ও একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থিতিসহ মোট ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫০ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ৪ কোটি ২০ লাখ ৫ হাজার ৩৫০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি একজন আয়করদাতা। আয়কর নথি অনুযায়ী তার পারিবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ৯৫ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৮ টাকা। ফলে ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪ হাজার ৩২৮ টাকা। উল্লিখিত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে আয়কর নথি অনুযায়ী অভিযোগ সংশ্লিষ্ট স্বপন ভট্টাচার্য্যরে পূর্ববর্তী অতীত সঞ্চয় ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৭০৮ টাকা এবং ২০০৭-২০০৮ হতে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত কৃষি আয় ২ লাখ ৬৭ হাজার ৬০০ টাকা, বেতন ভাতাদি ২৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭৩৪ টাকা ও মূলধনী আয় ১ হাজার ৩৫০ টাকাসহ সর্বমোট ৪৭ লাখ ৯২ হাজার ৩৯২ টাকার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায়। এছাড়া ২০২৩-২০২৪ করবর্ষের নথি অনুযায়ী তার ২ কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৮৫ টাকা ঋণ/দায় দেনার তথ্য পাওয়া যায়। ঋণসহ আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ৬৭ লাখ ৩৩ হাজার ১৭৭ টাকা। এক্ষেত্রে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট স্বপন ভট্টাচার্য্য কর্তৃক অসাধু উপায়ে ও তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের অসঙ্গিপূর্ণ সম্পদ ২ কোটি ৪৮ লাখ ৭১ হাজার ১৫১ টাকা। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মামলায় আরও বলা হয়েছে, আসামি স্বপন ভট্টাচার্য্য কর্তৃক ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নিজ নামে ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোট জমার পরিমাণ ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৪ টাকা এবং মোট উত্তোলনের পরিমাণ ৪০ কোটি ৩১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৯৪ টাকা। যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেন। এক্ষেত্রে তিনি অস্বাভাবিক লেনদেন করে মানিলন্ডারিং এর সম্পৃক্ত অপরাধ দুর্নীতি ও ঘুষ সংঘটনের মাধ্যমে এবং সরকারের দায়িত্বশীল পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাপ্ত অর্থ অথবা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করায় যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় দুদকের সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম উল্লেখ করেছেন, অনুসন্ধানকালে আসামি তন্দ্রা ভট্টাচার্য্যরে নামে কোনো স্থাবর সম্পত্তি পাওয়া যায়নি। তবে তার নামে ব্যবসায়িক পুঁজি, আসবাবপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার ও বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থিতিসহ মোট ৬ কোটি ১২ লাখ ১৪ হাজার ১০১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। আয়কর নথি অনুযায়ী তার পারবারিক ব্যয় পাওয়া যায় ৬০ লাখ ৩১ হাজার ৬৯৩ টাকা। ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ৭২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৯৪ টাকা। উল্লিখিত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে আয়কর নথি খোলার সময় পূর্ববর্তী অতীত সঞ্চয় ২০০৮-২০০৯ হতে ২০২৩-২০২৪ করবর্ষ পর্যন্ত গৃহসম্পত্তির আয়, করমুক্তসহ আয়সহ মোট ১৭ লাখ ৪০৩ টাকার আয় পাওয়া যায়। এছাড়া ২০২৩-২০২৪ করবর্ষের আয়কর নথি অনুযায়ী তার ১ কোটি টাকা ঋণ/দায় দেনার তথ্য পাওয়া যায়। ঋণসহ মোট আয়ের পরিমাণ ১ কোটি ১৭ লাখ ৪০৩ টাকা। এক্ষেত্রে আসামি তন্দ্রা ভট্টাচার্য্যরে জ্ঞাত আয়ের অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ পাওয়া যায় ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ টাকা। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অপর আসামি স্বপন ভট্টাচার্য্য অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অপরাধমূলক অসদাচরণ করে প্রভাব বিস্তার এবং আর্থিক সহায়তায় তার স্ত্রী আসামি তন্দ্রা ভট্টাচার্য্যরে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ টাকার সম্পদ অর্জনে ও দখলে রাখতে সহায়তা করেছেন। যা দন্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়া আসামি তন্দ্রা ভট্টাচার্য্যরে নিজ নামে ১০টি ব্যাংক অ্যাকউন্টে মোট ১০ কোটি ৩৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৩ টাকা জমা এবং ৭ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৯ টাকা উত্তোলন করেছেন। যা অস্বাভাবিক সন্দেহজনক লেনদেন। আসামি তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য স্বামীর ক্ষমতা ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে মানিলন্ডারিং এর সম্পৃক্ত অপরাধ দুর্নীতি ও ঘুষ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ অথবা সম্পদ গোপন করায় মানিলন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।