চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৩০তম মুত্যুবার্ষিকী আজ

0

সুলতান মাহমুদ, নড়াইল॥ বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর। দিনটি পালন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় শহরের মাছিমদিয়ায় এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালায় শিল্পী সুলতানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে কুরআনখতম, সকাল ৮টায় শিশুস্বর্গ মিলনায়তনে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, সকাল ৯টায় শিল্পী এসএম সুলতানের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া মাহফিল, সকাল সাড়ে ৯টায় শিশুস্বর্গে শিশুদের অংকিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী উদ্বোধন, সকাল ১০টায় শিশুস্বর্গ মিলনায়তনে শিল্পী এসএম সুলতানের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ, সকাল ১১টায় পটগান।শিল্পী সুলতানের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাশ^তী শীল।
এসব কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক ও সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি শারমিন আক্তার জাহান।
বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন লাল মিঞা নড়াইলের তৎকালীন জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের সুদৃষ্টিতে পড়েন। এ সময় তিনি সুলতানকে কলকাতায় নিয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও শিল্প-সমালোচক কলকাতা আর্ট স্কুলের গভর্নিং বডির সদস্য অধ্যাপক সায়েদ সোহরাওয়ার্দির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। একাডেমিক যোগ্যতা বিচার না করেই ১৯৪১ সালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অষ্টম শ্রেণি পাস সুলতানকে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি করা হয়। ১৯৪৪ সালে কলেজের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান দখল করে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হন শিল্পী সুলতান। কিন্তু প্রথাগত শিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারেননি তিনি। ছাত্রাবস্থায় তিনি কলেজ ছেড়ে কাশ্মীরের পাহাড়ি অঞ্চলে উপজাতীয়দের সঙ্গে বসবাস ও তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে চিত্রাংকন শুরু করেন। পরে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফরে বেরিয়ে পড়েন।
শিল্পী সুলতান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তানসহ বিভিন্নদেশ সফর করেন এবং এসব দেশে প্রখ্যাত চিত্রকরদের সাথে তার ছবি প্রদর্শিত হয়। ১৯৫৫-৫৬ সালের দিকে শিল্পী সুলতান মাটির টানে দেশে ফিরে আসেন এবং নিজস্ব উদ্যোগে জন্মস্থান নড়াইলের মাছিমদিয়ায় ফাইন আর্ট স্কুল ও শিশুস্বর্গ নামে শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।শিশু-কিশোরপ্রেমী সুলতান ১৯৮০ সালে নিজ বাড়িতে শুরু করেন শিশুস্বর্গের নির্মাণকাজ। তিনি নিজ উদ্যোগে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের ‘ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ’ নামে দ্বিতল নৌকা নির্মাণ করেছিলেন।এ নৌকায় তিনি শিশুদের নিয়ে চিত্রানদীতে ভ্রমণ করতেন এবং নৌকায় বসেই তাদের চিত্রাংকন শেখাতেন।
শিল্পী এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সম্মাননা হিসেবেও স্বীকৃতি পান তিনি। সুলতানের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যে তার নিজ বাড়িতে নির্মিত হয়েছে এস এম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।
১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর চিরকুমার এই শিল্পী দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নড়াইলের মাছিমদিয়ায় নিজ বাড়ির আঙিনায় তাকে সমাহিত করা হয়। সুলতানের মৃত্যুর পর তৎকালীন বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়াত মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম শিল্পী সুলতানের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।