৫ বছর ধরে এতিমদের খাবারে ভাগ বসাচ্ছে আ.লীগ নেতা খয়রাত হোসেন !

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি একেএম খয়রাত হোসেন নিয়মিত এতিমখানার খাবার খাচ্ছেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও জেলা আওয়ামী লীগের এই প্রতাপশালী নেতা যশোরের ঐতিহ্যবাহী কারবালার পীর নূর রোবহান শাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সভাপতি পদে বহাল আছেন। তার বাড়িতে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা নিয়মিত খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে এতিমখানার খাবার নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন শিক্ষার্থী এতিমখানা থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসার সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খয়রাত হোসেনের বাড়িতে। এক মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর বাইসাইকেলে চড়ে আসছে। এসময় বিভিন্ন বয়সী কয়েকজন তার পথরোধ করে দাঁড় করান। কিশোরের সাইকেলের ঝুলানো টিফিন ক্যারিয়ার খুলে খাবার দেখছেন তারা। এরপর ওই ব্যক্তিরা কিশোরের কাছে জানতে চান এই খাবার কোথায় যাবে, কোথায় থেকে এলো। উত্তরে কিশোর জানায়, সে যশোর শহরের কারবালা পীর নূর বোরহান শাহ ফোরকানিয়া এতিমখানার ছাত্র।

এতিমখানা থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসাটির সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খয়রাত হোসেনের বাড়িতে। ওই শিক্ষার্থী জানায়, এভাবেই প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা সভাপতির বাড়িতে খাবার নিয়ে যায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে ইউসুফ নামের একজন সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত চাচা পাঁচ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্বে। একবেলায় যদি তিনি ৬০ টাকার খাবার খান, তাহলে তিনবেলা খেয়েছেন ১৮০ টাকা। সে হিসেবে পাঁচ বছরে তিনি ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকার খাবার খেয়েছেন। এতিমদের খাবার খেয়ে তিনি তাদের হক মেরেছেন। এই টাকা এতিমদের দিতে হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের ঐতিহ্যবাহী কারবালা পীর নূর রোবহান শাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা মিলে দুই শাখায় অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে এখানে। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আংশিক অর্থায়নে ও জেলার বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিদের টাকায় চলে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করার জন্য একটি কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। যার সভাপতি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন। অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থীর তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। মাঝে মধ্যে শহরের বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষ দিনগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করেন। সেই খাবারই গ্রহণ করেন মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

মাদ্রাসা সূত্র জানা গেছে, মাদ্রাসাটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা একেএম খয়রাত হোসেনের তিনবেলা খাবারও এই মাদ্রাসা থেকে যায়। দুপুরে শিক্ষার্থীরা দিয়ে আসে। আর রাতে মাদ্রাসার শিক্ষকরা সভাপতির বাড়িতে দিয়ে আসেন। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে এতিমদের খাবারে ভাগ বসিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির এক নেতা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত হোসেন যশোরের বিশিষ্ট ও বিত্তশালী ব্যক্তি। তিন মেয়ে উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। খয়রাত হোসেনের শহরে মার্কেট ও বাসা রয়েছে। তারপরও তিনি এতিম শিশুদের খাবার খাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার এ ধরনের কর্মকান্ড নিম্ন মানসিকতার। অন্যায়ও বটে।