অভয়নগরের হোসেন দ্বীপবাসীর কান্না কেউ শোনে না

0

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর)॥ যশোরের অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের বিচ্ছিন্ন একটি এলাকার নাম হোসেন দ্বীপ। যেখানে বসবাস করেন হোসেন আলীর বংশধর, যা হোসেন দ্বীপ নামেই পরিচিত। ১৯৮১ সালে পারিবারিক কলহের জেরে পিতা-ভাইদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা ও বলারাবাদের মাঝামাঝি স্থানে ফাঁকা বিলের মধ্যে বসতি স্থাপন করেন হোসেন আলী খন্দকার। তবে এখনকার মত তখন ভবদহ অঞ্চলের এমন করুণদশা ছিলনা। কৃষিকাজের সুবিধার্থে বসবাসের জন্যে বেছে নিয়েছিলেন এমন নির্জন জনপদ। তবে যে আশায় বুক বেঁধে বাপ -দাদার পৈতৃক ভিটা ছেড়েছিলেন হোসেন আলী খন্দকার সে আশা নিরাশায় পরিণত হয় অল্প কিছুদিনের মধ্যে। সাগর ও নদ- নদীর জোয়ারের পানিতে পলি এসে ভবদহ অঞ্চলের নদ-নদী ভরাট হয়ে যায়। বিলের চেয়ে নদীর উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে হারিয়ে যায় নদীর নাব্য। নব্বই দশকে এসে স্থায়ীভাবে পানিবন্দি হন তারা।


সেই থেকে পানির সাথে যুদ্ধ করে কোনমতে বেঁচে আছেন হোসেন আলীর পরিবার। কয়েক বছর আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান হোসেন আলী। দুর্ভোগের হাত থেকে মৃত পিতার মুক্তি মিললেও পিতার স্মৃতিবিজড়িত সেই বাড়ি আঁকড়ে ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন সন্তানরা।
জনবসতি এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সেই হোসেন দ্বীপে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হোসেন আলী খন্দকারের ছেলে ওমর আলী খন্দকার, ভাই আজগর আলী খন্দকার ও বোন জাহানারা বেগমসহ মোট ৪ টি পরিবারের ১৫ জন সদস্য মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাতে পানিবন্দি হন অভয়নগরের ২৫ গ্রামের মানুষ। আর তাতেই হোসেন দ্বীপের বাড়িগুলো পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে যায়।
গত দুমাস ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে দ্বীপটি। হোসেন আলীর ছেলে ওমর আলী জানান, আমাদের সবার ঘরের মধ্যে এখন হাঁটু পানি। উঠানে বুক সমান পানি। যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। বিলের মাঝখানে বাড়ি হওয়ায় কেউ আসেনা। খোঁজখবর নেয়না। এমনকি আমরা কোন সাহায্য- সহযোগিতা পাইনা।
জাহানারা বেগম নামের অপর এক বাসিন্দা আক্ষেপ করে বলেন, আমরা কি এই পানিবন্দি অবস্থা থেকে কোনদিন মুক্তি পাবনা? গরু- ছাগল, হাঁস- মুরগী ফেলে রেখে কোথাও যাইনি। ঘরের মধ্যে মাচা করে বসবাস করছি। আয় -ইনকাম না থাকায় বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, পানির কারণে আমরা টয়লেটে যেতে পারিনা। নৌকার ওপর বসে সব ধরনের প্রয়োজন সারতে হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান জানান, যারা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়েছে। এর বাইরে সবাইকে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছি। আশ্রয় কেন্দ্রে না আসলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ দেওয়াটা অসম্ভব।