সিইসিসহ পাঁচ নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পদত্যাগ ঘোষণার আগে ‘বিদায়ী ব্রিফিং’-এ ভবিষ্যতের প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছেন হাবিবুল আউয়াল।
এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গভবন প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। উইং বলেছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব কমিশনারের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে।’
২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নেয়া এই কমিশন আড়াই বছরে বিদায় নিলো। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনার পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
ঘোষণা শেষে পদত্যাগ পত্রে সই করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপর অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারও পদত্যাগ করেন। সিইসিসহ তিন কমিশনার ইসি সচিব শফিউল আজিমের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন, যা রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠনো হবে বলে জনিয়েছে ইসি সূত্র।

সংবাদ সম্মেলনে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনার ব্রি.জে (অব) আহসান হাবিব খান এবং মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। অপর দুই কমিশনার মো. আনিছুর রহমান এবং বেগম রাশেদা সুলতানা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও, ইসি সচিব শফিউল আজিমের কাছে সকালে তারা পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ইসির ওই সূত্র।
বিদায়ী বক্তব্য সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনাদের অবহিত করতে চাই আমিসহ কমিশনাররা দেশের পরিবর্তিত বিরাজিত অবস্থায় পদত্যাগ করতে মনস্থির করেছি। আমরা পদত্যাগপত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতি সমীপে উপস্থাপনের নিমিত্ত কমিশনের সচিবের হাতে দিব।
কমিশন বিভিন্ন কারণে নির্ভেজাল গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে অক্ষম বা অসমর্থ হতে পারে জানিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসির ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন নিষ্পন্ন করা অতিশয় কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সকল দোষ বা দায়-দায়িত্ব সকল সময় কেবল নির্বাচন কমিশনের ওপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে। একটি কমিশন হয়তো অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। কিন্তু সকল সময় সকল কমিশনই অসৎ বা পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে না।
হাবিবুল আউয়ালের সংবাদ সম্মেলনে পড়া লিখিত ভাষণের শব্দসংখ্যা ছিল সাত শতাধিক। লিখিত ভাষণের শেষে ‘নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে’ তিনি কিছু প্রস্তাবনা দেন। হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বর্তমান ও অতীত থেকে আহৃত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও উপলব্ধি থেকে ভবিষ্যতের জন্য কিছু প্রস্তাবনা সরকারের সদয় বিবেচনার জন্য রেখে যাওয়া কর্তব্য মনে করছি। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমরূপতার কারণে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (দলীয়-ভিত্তিক) নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ ক্ষেত্র হতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচন চার বা আটটি পর্বে, প্রতিটি পর্বের মাঝে তিন থেকে পাঁচ দিনের বিরতি রেখে, অনুষ্ঠান করা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সহজ ও সহায়ক হতে পারে। আমাদের প্রবর্তিত অনলাইনে নমিনেশন দাখিল অব্যাহত রেখে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার অপটিমাইজ করতে পারলে উত্তম হবে। প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরও সুনিশ্চিত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৩ থেকে হওয়া অতীতের অন্যান্য সকল নির্বাচন ছাড়াও ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিতর্কিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন পরবর্তী সকল নির্বাচনগুলো সতর্কতার সাথে আয়োজনের চেষ্টা করেছে। জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে দিনের বেলায় ব্যালট পেপার প্রেরণ, কতিপয় উপনির্বাচনে ভিডিও পর্যবেক্ষণ, ইভিএম ব্যবহার, দেশের সকল জেলায় একই দিনে তবে প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক সীমানার মধ্যে মাঝে ৩/৫ দিন বিরতি দিয়ে ৫/৬ টি ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠান, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপকভাবে রদবদল, ইত্যাদি গৃহীত ব্যবস্থা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খল করতে অনেকটাই সহায়ক হয়েছিল। নির্বাচন মূলত, একদলীয় হওয়ার কারণে কারচুপি বা সরকারিভাবে প্রভাবিত করার প্রয়োজনও ছিল না। নির্বাচন দলের ভেতরেই হয়েছে। মধ্যে হয়নি।
লিখিত বিদায়ী বক্তব্যে আরও বলা হয়, কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দু’বছর সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের ৯৯২ টি, উপজেলা পরিষদের ৪৯৬ টি, জেলা পরিষদের ৭১ টি, পৌরসভার ৯০টি এবং সিটি কর্পোরেশনের ১৬টি নির্বাচন করেছে। নির্বাচনগুলোর সততা, সিদ্ধতা, নিরপেক্ষতা অবাধ-হওয়া নিয়ে অতীতের ন্যায় ব্যাপক বিতর্ক বা সমালোচনা হয়নি। উপ-নির্বাচনসহ জাতীয় সংসদের মোট ৩১৮ টি আসনে কমিশন নির্বাচন করেছে। দলীয়ভাবে ইনক্লুসিভ না হওয়ার কারণে নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এটি সঠিক ও যৌক্তিক। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে কোনো নির্বাচন কমিশন সংবিধান উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেছে এবং সেই কারণে নির্বাচন হয়নি এমন উদাহরণ নেই। সরকার বারবার বলছেন ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচন বারংবার ব্যর্থ হওয়ার প্রকৃত সত্য ও কারণ এই কথাটির মধ্যেই নিহিত।
সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের জবাব দেননি বিদায়ী সিইসি হাবিবুল আউয়াল। সংবাদ সম্মেলন শেষে নির্বাচন ভবন ত্যাগ করেন সিইসিসহ তিন নির্বাচন কমিশনার। এ সময় সিইসিকে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে চলে যেতে দেখা যায়।
অপদিকে সংবাদ সম্মেলনে না থাকলেও দুপুর পৌনে একটার দিকে নির্বাচন ভবন ত্যাগ করতে দেখা যায় নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা, আনিছুর রহমানকে। তাদের সঙ্গে ছিলে কমিশনার মো. আলমগীর।