যশোরে পুলিশ ফাঁড়ির ভেতর আইনজীবীকে মারধরের অভিযোগ জেলা আ.লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের নারী, শিশু ও মানবপাচার দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পিপি অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান মকুলকে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পর মারার অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের বিরুদ্ধে। রোববার রাতে পুরাতন কসবা পুলিশ ফাঁড়ির ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর রেজাউল করিমসহ দুইজন পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সোমবার বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সোমবার বিকেলেই বিষয়টি সর্বত্র জানাজানি হওয়ায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামকে দফায় দফায় ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ফাঁড়িতে উপস্থিত একজন পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তিনি ফাঁড়িতে থাকাকালীন এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল অভিযোগ করেন, গত রোজার ঈদের আগে তারই অনুরোধে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার মানবিক কারণে মুজিব সড়কের ফুটপাতের ওপর ছিন্নমূল হকারদের ব্যবসা করার জন্যে মৌখিক অনুমতি দেন। সেই থেকে ছিন্নমূল হকাররা শৃঙ্খলার সাথে ব্যবসা করে আসছেন। রোববার বিকেলে ঘোপের শাহিন নামে এক যুবক নিজেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের লোক পরিচয়ে মুজিব সড়কের ফুটপাতের ছিন্নমূল হকারদের একজনের টেবিল জোরপূর্বক সরিয়ে নিজের টেবিল রেখে দেন। এ ঘটনায় ছিন্নমূল হকাররা পুরাতন কসবা পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে এসআই হেলাল উজ্জামানের কাছে অভিযোগ করেন। পরে রাত ১০টার দিকে অভিযুক্ত শাহিনকে ফাঁড়িতে ডেকে নিয়ে যান এসআই হেলাল উজ্জামান। এ সময় সেখানে ছিন্নমূল হকাররাও উপস্থিত ছিলেন। দুইপক্ষের কাছ থেকে তাদের বক্তব্য শোনার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাড. মুকুলকে মোবাইল ফোন করে ফাঁড়িতে আসতে অনুরোধ করেন এসআই হেলাল উজ্জামান। তার অনুরোধে ফাঁড়িতে যান অ্যাড. মুকুল। এ সময় তিনি শাহিন নামে ওই যুবকের কাছে জোর করে হকারদের টেবিল সরিয়ে নিজের টেবিল বসানোর কারণ জানতে চান। তখন শাহিন নিজেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের লোক হিসেবে পরিচয় দেন এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। এরই এক ফাঁকে শাহিন মোবাইল ফোন করলে শহিদুল ইসলাম মিলন ১৫/২০ জনকে সাথে নিয়ে ফাঁড়িতে আসেন। এ সময় শহিদুল ইসলাম মিলন কারো কাছে কোনোকিছু না শুনেই তুই চাঁদাবাজি করিস, মাস্তানি করিস ইত্যাদি বলেন এবং আচমকা গালি দিয়েই অ্যাড. মুকুলকে এলোপাতাড়ি চড় -থাপ্পর মারেন। তখন ফাঁড়িতে উপস্থিত ইনচার্জ ইনসপেক্টর রেজাউল করিম ও এসআই হেলাল উজ্জামান এগিয়ে গিয়ে শহিদুল ইসলাম মিলনকে নিবৃত করেন। এরপর শহিদুল ইসলাম মিলন দলবল নিয়ে দ্রুত ফাঁড়ি থেকে চলে যান। এছাড়া যাওয়ার সময় এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্যে অ্যাড. মুকুলকে হুমকি দেন তিনি। ওই ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন অ্যাড. মুকুল। তিনি লজ্জায় অপমানে ফাঁড়ি থেকে বাড়িতে ফিরে যান।
অ্যাড. মুকুল আরও জানান, তিনি জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য। এ কারণে ওই ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে সোমবার বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. জুলফিকার আলী জুলু জানান, তারা অ্যাড. মুকুলের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সমিতির ১ নং ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভের আয়োজন করেছেন। কর্মসূচি পালনে সমিতির সকল সদস্যকে উপস্থিত থাকার জন্যে তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।
সোমবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনকে কয়েক দফা ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ না করায় অভিযোগের বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুরাতন কসবা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইনসপেক্টর রেজাউল করিমকে মোবাইল ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে এসআই হেলাল উজ্জামান দাবি করেন, তার সামনে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ছিন্নমূল হকার নাসির উদ্দিন, রবিউল ইসলাম, আরাফাত ও আশরাফুলসহ কয়েকজন জানান, ওই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। আজ মঙ্গলবার তারা মানববন্ধন পালন করবেন।