খুশির ঈদ, ত্যাগের ঈদ আজ

0

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ: আজ খুশির ঈদ। ত্যাগের ঈদ। তাইতো কবি নজরুলের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলাই-‘ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !/দুর্বল! ভীরু ! চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুব্ধ মন !/ধ্বনি উঠে রণি’ দূর বাণীর, -/আজিকার এ খুন কোরবানীর !/দুম্বা-শির রুম্-বাসীর/শহীদের শির সেরা আজি !- রহমান কি রুদ্র নন ?/ব্যাস ! চুপ খামোশ রোদন !/আজ শোর ওঠে জোর “খুন দে, জান দে , শির দে বৎস” শোন !/ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !’
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব আমেজের মধ্যদিয়ে সোমবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে কুরবানির প্রচলন শুরু। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) কে কুরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। ওই অনন্য ঘটনার স্মরণেই এ কুরবানির প্রচলন। বছর ঘুরে আবার এলো সেই পবিত্র উৎসব ঈদুল আজহা। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এ উপমহাদেশে উদযাপিত হবে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ এই উৎসব। তবে চান্দ্রমাসের হিসেবের তারতম্যের কারণে আজ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে।
মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব ঈদকে ঘিরে আনন্দ-উদ্দীপনার কমতি নেই।
কুরবানির পশু কেনার পর্ব শেষ করেছেন অনেকেই। বাকিরা আজ শেষ করবেন। পথের কষ্ট, দুর্ভোগ মাড়িয়ে গ্রামের বাড়ি পৌঁছাও প্রায় শেষ।
কিন্তু এবার কুরবানির ঈদ এমন এক সময় এল, যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের চাপের পাশাপাশি এখন যুক্ত হয়েছে তীব্র গরম। তাই ছায়া পড়েছে এবারের সাধারণ মানুষের ঈদ আনন্দে। গত কয়েক বছর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মানুষ স্বস্তিতে উদ্যাপন করতে পারছে না।
হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হয়। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণীতে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আরও বাণী দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়াও সরকার ও বিরোধী দলের সিনিয়র রাজনীতিক, বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কুরবানির ইতিহাস
কুরবানির ইতিহাস সুপ্রাচীন। হজরত ইব্রাহিম (আ.)–এর সুন্নত অনুসরণ করেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা ১০ জিলহজ কুরবানি দিয়ে থাকেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কুরবানির জন্য মহান আল্লাহতাআলার নির্দেশ পেয়েছিলেন। পরপর দুবার তিনি পশু কুরবানি করেন। তৃতীয়বার একই নির্দেশ পেয়ে তিনি অনুধাবন করেন, পুত্র ইসমাইলের চেয়ে প্রিয় তাঁর কেউ নেই। আল্লাহ পাক তাঁকেই কুরবানি করতে নির্দেশ দিচ্ছেন। হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)কে আল্লাহর নির্দেশ জানালেন। শিশু ইসমাইল (আ.) নির্ভয়চিত্তে সম্মতি দিয়ে পিতাকে আল্লাহতাআলার নির্দেশ পালন করতে বলেন। কুরবানি করতে উদ্যত হজরত ইব্রাহিম (আ.) পুত্রস্নেহে যেন দুর্বল না হয়ে পড়েন, সে জন্য তিনি চোখ বেঁধে নিয়ে পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতে এ সময় হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানি হয়ে যায়।
ঈদের জামায়াতের আগে খুতবায় হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর কুরবানির এই অমর কাহিনি তুলে ধরেন ইমামরা। এর মধ্য দিয়ে বিনম্রচিত্তে তাঁদের স্মরণ করবেন সারা বিশ্বের মুসলমানরা।
১০ দিন আগেই ঠিক হয়ে যায় ঈদের দিনক্ষণ। সে অনুসারে পশু কেনাসহ ঈদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে থাকেন সবাই। কুরবানি দেওয়া আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ওয়াজিব। ১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হলেও পরের দুই দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও কুরবানি করার বিধান রয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে সমস্ত লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ, স্বার্থপরতা তথা মানুষের ভেতরের পশুত্বকে ত্যাগের মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি লাভের ভেতরেই রয়েছে কুরবানির প্রকৃত তাৎপর্য।
ঈদুল আজহা আমাদের দেশের মানুষের কাছে ‘কুরবানির ঈদ’ নামেই পরিচিত। কুরবানির পশু কেনা, তার যতœ-পরিচর্যাতেই ঈদের মূল প্রস্তুতি ও আনন্দ।