অভয়নগরে পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরের অভয়নগরে পুলিশ হেফাজতে এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়। শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ।
মৃত আফরোজা বেগম (৪০) অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মডেল কলেজের পেছনের বাসিন্দা আব্দুল জলিলের স্ত্রী।
পরিবারের সদস্যরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেছেন থানায় নেওয়ার আগে বাড়িতে আফরোজা বেগমকে মারধর করেন অভয়নগর থানার এএসআই সিলন আলী। এ কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অভয়নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শুভ্র প্রকাশ দাস জানান, শনিবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে ৩০ পিস ইয়াবাসহ আফরোজা বেগমকে আটক করা হয়। রাতে তাকে থানা হাজতে রাখা হয়। সকাল ৮টার পর তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সুস্থ বোধ করলে আবার তাকে থানায় আনা হয়। কিছুক্ষণ পর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন আবারও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসিব মোহাম্মদ আলী হাসান জানান, বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে আফরোজা বেগমকে জরুরি আনা হয়। তখন তিনি মৃত ছিলেন। মৃত্যুর কারণ জানতে মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রকিবুল ইসলাম বলেন, ওই মহিলা খুবই দুর্বল ছিলেন এবং ব্লাডপ্রেশার খুব বেশি ছিলো। যে কারণে আমি খুলনা রেফার্ড করতে চাইলে পুলিশের অনুরোধে তাকে যশোরে রেফার্ড করা হয়।
পুলিশের হাতে আটক অবস্থায় অসুস্থ ওই নারীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে তার ছেলে ও স্বামী নিয়ে আসেন বলে জরুরি বিভাগের খাতায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে পুলিশের কারো নাম নেই।
অভয়নগর থানা থেকে জানা যায়, রোববার (২ জুন) মৃত আফরোজা বেগমের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১)১০(ক) ধারায় একটি মামালা রুজু করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালের মর্গের সামনে অবস্থানরত মৃত আফরোজা বেগমের স্বামী আব্দুল জলিল ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে যাওয়ার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাবিদ হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুর রহমান সোহাগের কাছে অভিযোগ করেন, থানার এএসআই সিলন আলী আফরোজা বেগমকে আটকের সময় তার বাড়িতে মারধর ও ফ্যানের সাথে চুল বেধে নির্যাতন করেন। এতে তিনি (আফরোজা) অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় তাকে থানায় নেওয়া হয়।
আফরোজা বেগমের ছেলে মুন্না বলেন, তার মাকে আটকের পরপরই তিনি থানায় যান। থানার সামনে থাকাকালে তার মাকে প্রথম যখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় তখন সেখানে চিকিৎসকরা সাথে থাকা পুলিশকে জানিয়েছিলেন তার রক্তশূন্যতা ও প্রেশার অনেক হাই। তারা দুইটি পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তা না করে তার মাকে আবার থানায় নিয়ে যায়। পরে আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয় এবং সেখান থেকে যশোরে পাঠানো হয়।
মুন্নার দাবি অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার জন্য যখন গাড়িতে তোলা হচ্ছিল তখনই তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
আফরোজা বেগমের ছোট ছেলে নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির মোল্যা সাংবাদিকদের বলে, ‘গতকাল রাতে আম্মু বাড়ির পাশে পানি আনতে যান। এ সময় বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ আসে। এর মধ্যে সিলন দারোগা (এএসআই সিলন আলী) আম্মুকে তার কাছে যা আছে, বের করে দিতে বলেন। তার কাছে কিছু নেই জানালে তিনি (সিলন আলী) একজন নারী পুলিশকে ফোন করে ডেকে আনেন। তিনি আম্মুর শরীর তল্লাশি করেও কিছু পাননি। এরপর সিলন দারোগা আম্মুকে চড় দিতে দিতে শোয়ায়ে ফেলেন। আম্মুকে মারতে নিষেধ করলে তিনি (সিলন দারোগা) আমাকেও দুটি চড় মারেন। এরপর আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে নারী পুলিশের সহায়তায় ঘরে দরজা দিয়ে কী করেছে, জানি না। তবে আমার সামনে চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে আম্মুকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল।’
আফরোজা বেগমকে নির্যাতন করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই সিলন আলী গণমাধ্যমে বলেছেন, আফরোজা বেগমকে মারধর বা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তার পরিবারের সদস্যরা এটা বললে সেটা ঠিক বলছেন না। এই অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
অভয়নগর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন, আটক আসামি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে অবস্থা খারাপ থাকায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান । ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে স্বজনদের কাছে পুলিশ লাশ হস্তান্তর করে।