ভোটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ যশোরের ৫ উপজেলায় ৭৩ ভাগ ভোটার কেন্দ্রে যায়নি

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ পোস্টার মাইকিং এ প্রচারণা চললেও যশোরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কার্যত উৎসবহীন হয়ে পড়েছে। ফলে সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে পারছেন না প্রার্থীরা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ জেলার সদ্য সমাপ্ত যশোরের পাঁচটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শতকরা ৭৩ দশমিক ১৫ জন ভোট দেয়নি। অবশ্য বেসরকারি মতে ভোটারের অনুপস্থিতির ভোটারের মধ্যে মাত্র ৬২ হাজার ৮১ চিত্র আরও হতাশাব্যজ্ঞক। সাধারণ ভোটররা বলছেন, গেল ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মত যশোরে উপজেলা নির্বাচনেও ভোটারের আকাল দেখা দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন ভোটররা উৎসাহ ও আমেজ সবটাই হারিয়েছে। তবে সদ্য সদস্য সমাপ্ত জেলার পাঁচটি উপজেলার সাধারণ ভোটাররা বলছেন, প্রার্থীরা তাদের ভোট কেন্দ্রে নিতে সব ধরণের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচনের প্রতি দেশের সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের চরম অনীহা এবং আস্থাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। এই নির্বাচন তার বাস্তব প্রমাণ। সদ্য সমাপ্ত যশোরের পাঁচটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, শার্শা উপজেলায় ২ লাখ ৯৯ হাজার ১১১ জন ভোটারের মধ্যে ৫৫ হাজার ৭২৭ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। প্রদত্ত ভোটের হার শতকরা ১৮ দশমিক ৬৩ ভাগ। এই উপজেলায় শতকরা ৮১ দশমিক ৩৭ ভাগ ভোটার ভোট দান থেকে রিবত ছিলেন। কেশবপুরে ২ লাখ ২০ হাজার ৯৫৪ জন জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এই উপজেলায় প্রদত্ত ভোটের হার শতকরা ২৮ দশমিক ১০ ভাগ। শতকরা ৭১ দশমিক ৯০ ভাগ ভোটার ভোট দান থেকে রিবত ছিলেন। ঝিকরগাছায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ১৬৮ জন ভোটারের মধ্যে ৬৪ হাজার ২২২ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এই উপজেলায় প্রদত্ত ভোটের হার শতকরা ২৪ দশমিক ৫১ ভাগ। শতকরা ৭৫ দশমিক ৪৯ ভাগ ভোটার ভোট দান থেকে বিরত থাকেন। চৌগাছা উপজেলায় ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৩২ জন ভোটারের মধ্যে ৬২ হাজার ৮৪৯ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। প্রদত্ত ভোটের হার শতকরা ৩১ দশমিক ৫১ ভাগ। এই উপজেলায় শতকরা ৬৮ দশমিক ৪৯ ভাগ ভোটার ভোট দান থেকে বিরত ছিলেন। মনিরামপুরে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৩৫ জন ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এই উপজেলায় প্রদত্ত ভোটের হার শতকরা ৩১ দশমিক ৪৭ ভাগ। ৬৮ দশমিক ৫৩ ভাগ ভোটার ভোট দান থেকে রিবত ছিলেন। তবে কাগজে কলমে ভোটের হার এমন দেখানো হলেও বাস্তবতার সাথে মিল নেই এমনটি বলছেন, সাধারন ভোটররা। মনিরামপুরের পৌর সভার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে ভোট গ্রহণের দিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর কেন্দ্রে ভোটারের খরা দেখেছি। যেখানে একজন প্রার্থীর নিজের কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি এমন হয় সেখানে অন্যান্য কেন্দ্রের অবস্থা কেমন হতে পারে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। মামুন হোসেন নামে শার্শা উপজেলার একজন ভোটার বলেন, আগে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখতাম। কিন্তু এ নির্বাচনে ভোটারের লাইন চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আ.লীগ দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। তাই তাদের আহ্বানে জনগন ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না। কারণ তারা বোঝে, তাদের ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়না, ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত। বিপ্লবী কমিউনিস্ট লিগের জেলা কমিটির সম্পাদক তসলিম উর রহমান বলেন, এই ভোট হচ্ছে কতৃত্ববাদের অভ্যন্তরীন মাতববারদের নির্বাচন। এই নির্বাচনের প্রতি জনগণের কোন আস্থা নেই। তারা তাদের মুক্তির জন্য যেই নির্বাচনের ভোট দেবার সুযোগ পাবে, সেই নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবে। এই নির্বাচনের জনগণের সেই সুযোগ নেই বলে তাদের ভোটের প্রতিও কোন আগ্রহ নেই।