চৌগাছায় জমজমাট সবজি বাজার লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার প্রধান পাইকারি বাজারে গ্রীষ্মে মিলছে শীতের অধিকাংশ সবজি। হরেক রকমের সবজির সমারোহ ঘটলেও দাম আকাশ ছোঁয়া। একই সবজি হাত বদল হয়ে পাইকারি বাজার হতে খুচরা বাজারে গেলেই দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। ন্যায্য দাম হতে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষি। আর পকেট খালি হচ্ছে ক্রেতা সাধারণের অভিমত বিশ্লেষকদের।
শুক্রবার চৌগাছার সাপ্তাহিক হাটের দিনে খুব সকালে পাইকারি প্রধান সবজি বাজারে গিয়ে দেখা যায় সবজি উৎপাদনকারী কৃষক, আড়তদার আর ব্যাপরীদের পদচারণায় মুখর। আড়তগুলোতে চলছে সবজি বিক্রির হাঁকডাক। ব্যাপারিরা ছুঁটছেন হাটের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে চলছে সবজির বেচাকেনা।
এ সময় কথা হয় উপজেলার বাদেখানপুর গ্রামের কৃষক ইসরাইল মোল্লা, জিয়াউর মোল্লা, শহিদুল মোল্লা, নারায়ণপুর গ্রামের আক্তার হোসেন, মিলন হোসেন, ইসমাইল হোসেন, কাশিপুর গ্রামের আমিনুর রহমানের সাথে। তারা বলেন, মিষ্টি কুমড়া, কলা ও কচুর লতি নিয়ে এসেছেন বাজারে। কচুরলতি ২০ হতে ২৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩৫ হতে ৪০ টাকা এবং কলা ৩০ হতে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। কিন্তু একই সবজি খুচরা বাজারে গিয়ে কেজিতে ১০ হতে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষকরা বলেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সবজি উৎপাদন করি। এই সবজি হতে লাভবান হচ্ছেন ব্যাপারি, আড়তদার ও খুচরা বিক্রেতারা। তারা যে ভাবে লাভ করছে ওই টাকা যদি কৃষক সরাসরি পেতো তাহলে কৃষকের আর কোনো অভাব থাকতো না। লেবু বিক্রি করতে এসেছেন জগদীশপুর গ্রামের কৃষক সোহাগ ও ফটিক। তারা বলেন, একটি লেবু উৎপাদনে কৃষককে কতই না সময় পার করতে হয় আর কত টাকা ব্যয় হয়। সেই লেবু আমরা বাজারে এনে পিস ২ থেকে ৩ টাকায় বিক্রি করছি আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৫ থেকে ৬ টাকায়। চোখের সামনে দেখছি আমার ঘাম ঝরা ফসল হতে এক ব্যবসায়ী কি ভাবে রোজগার করে নিয়ে যাচ্ছে আমার কিছুই থাকছে না বলার। বাজারে সবজির আড়তদার আশা বিশ্বাস, কবির হোসেন, সামছুল বিশ্বাস, মজনুর রহমান, বিএম আইনাল বলেন, যুগযুগ ধরে আড়তের ব্যবসা চলে আসছে। কৃষকরা অনেক সময় অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে ছুটে আসেন আমাদের কাছে আমরা টাকা ধার দিয়ে থাকি। তিনি সবজি উৎপাদন করে আমাদের আড়তে দিয়ে বসে থাকেন। আমরা সবজি বিক্রি করে দিয়ে মণ প্রতি সামান্য টাকা নিয়ে থাকি যা সকলেরই জানা।
চৌগাছায় উৎপাদিত সবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে প্রতিনিয়ত যাচ্ছে এমনটিই জানালেন ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার ভোরে তারা চৌগাছায় চলে আসেন এবং সবজি কিনে ট্রাক লোড দিয়ে গন্তব্যে রওনা দেন। এ সময় কথা হয় মাদারীপুর জেলার ব্যাপারি শহিদ ও কামাল হোসেন, বরিশাল জেলার দেলোয়ার, চট্টগ্রামের ঝণ্টু, লাকসামের বাচ্ছু, বারবাজারের হানিফসহ একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে। তারা বলেন, চৌগাছা বাজারের সবজি দেশের প্রতিটি এলাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই বাজার হতে সবজি কিনে সকলেই লাভবান হন, সে কারণে অনেক কষ্ট ভোগ করে আমরা চৌগাছায় ছুটে আসি।
চৌগাছা সবজি বাজারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক গোবিন্দ কুমার বলেন, এই একটি মাত্র সবজি বাজার হতে প্রায় প্রতি দিনই শ শ মানুষ নানা ভাবে রোজগার করছেন। ভ্যান চালক থেকে শুরু করে লেবার, ট্রাকচালক সকলেই রোজগার করছেন। আমরা হাট মালিকরা সকলের সার্বিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য সুবিধাগুলো যথাযথ ভাবে দিয়ে যাচ্ছি, যাতে করে চৌগাছাবাসীর সুনাম দেশের প্রতিটি প্রান্তে অক্ষুণœ থাকে।