সব ক্ষেত্রেই ভোক্তাকে ঠকানো হচ্ছে

0

আকরামুজ্জামান ॥ সবক্ষেত্রেই ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রেই শৃঙ্খলা নেই। নেই সঠিক বাজারব্যবস্থা। যে যার খুশিমতো দাম নিচ্ছে। ডিজিটাল আর্থিক খাতে প্রতারণা, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-টিকেটিংয়ে মনগড়া সার্ভিস চার্জ, ই-কমার্স সেবা, রাইড শেয়ারিং, অনলাইন ফুড ডেলিভারি সিস্টেম, বিভিন্ন সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে ক্রেতা-ভোক্তাদের অধিকার হরণ চলছে প্রতিনিয়ত। ভোক্তা অধিকার বলে যা আছে তা অনেকটা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
শাহাজান কবীর নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমরা প্রতিটা ক্ষেত্রেই পদে পদে ঠকছি। অথচ এর কোনো প্রতিকার নেই। নানা কৌশলে বিভিন্ন খাত থেকে আমাদের পকেট কাটলেও সেটি সামনে আসছে না। তিনি বলেন, আধা কিলোমিটার রাস্তার জন্য যে বাস ভাড়া, ৫ কিলোমিটারের জন্যও একই ভাড়া। এক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয় না। এক্ষেত্রে একজন যাত্রীর পকেট থেকে কতটুকু বেশি টাকা গেলো সেটি কেউ হিসেব করেন না। এভাবেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোক্তার পকেট কাটা হচ্ছে।
যশোর শহরের ওয়াপদা এলাকার বাসিন্দা শাওন হোসেন বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের জ্বালানি তেল ক্রয় করি। অথচ এখানে কতটা ভোক্তা অধিকার হরণ হয় সেটি কেউ হিসেব করে না। তিনি বলেন, এক লিটার পেট্রোলের দাম ১২২ টাকা ২৯ পয়সা, অকটেন ১২৬ টাকা ২৯ পয়সা ও ডিজেল ১০৬ টাকা ২৯ পয়সা নির্ধারণ করা। অথচ আমরা ভোক্তারা যখন তেল কিনতে যাই তখন খুচরা পয়সার হিসেব থাকে না পাম্প মালিকদের ক্ষেত্রে। তারা নিজেরা খুচরো টাকা রাখেন না। এ কারণে ১২২ টাকার স্থলে ১২৫ টাকার ও ১২৬ টাকার স্থলে ১৩০ টাকার জ¦ালানি তেল কিনতে বাধ্য করা হয় ভোক্তাকে। অধিকাংশ পাম্প মালিকরা খুচরা বাকি টাকাগুলো আর ফেরত দেন না। অথচ একজন ভোক্তা কোনো ২৫ পয়সা কম দিলেও তারা মানতে চায় না।
তবে এ বিষয়ে উপশহর খাজুরা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শিশু হসপিটালের পাশে প্রান্তিক পেট্রোলিয়ামের ম্যানেজার মসলেম উদ্দীন বলেন, ক্রেতারা তেল কিনতে আসলে রাউন্ড ফিগারে টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যান। ডিজিটাল মেশিনের কারণে এখন আর কোনো ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই।
ফারিহা জেসমিন নামে আরেক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, অনলাইনে আমরা অনেক পণ্য ক্রয় করি। অর্ডার দেওয়ার পর পণ্যটা যখন হাতে পাই তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়। এই ঈদে একটি ব্যাগ কিনেছেন এক হাজার ২০০ টাকায়। টাকা পরিশোধের পর যখন ব্যাগটি হাতে পান, দেখেন এটির বাজার মূল্য কোনোভাবেই ৩০০ টাকার বেশি হবে না। তিনি বলেন, আমরা অভিযোগ করব কী, ঠকতে ঠকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। প্রতারণার বিষয়টি সবাই এক রকম মেনেই নিয়েছি।
শরিফুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, বাজারে অনেক পণ্য আছে তার মূল্য তালিকায় রাউন্ড ফিগারের শেষে ৫০ পয়সা বা ৩০ পয়সা লেখা আছে। অথচ ওই পণ্যটা কেনার পর আমি যখন টাকা পরিশোধ করি তখন আমাকে বাকি খুচরা পয়সা ফেরত দেওয়া হয় না। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতে পণ্য ক্রয়ে ভোক্তাদের শতভাগ অধিকার মেনে চলা হয়।
ব্যাংকিং ক্ষেত্রেও প্রতারণার শিকার হন ভোক্তারা। বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে অন্যান্য সেবা বিল প্রদানের সময়ও খুচরা পয়সাগুলো ভোক্তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। টাকা পরিশোধের সময় খুচরা পয়সা নেই বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে ওই গ্রাহকের বাকি খুচরা পয়সা না নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হতে হয়।
এ বিষয়ে জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (বাজার কর্মকর্তা) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার আইন-২০০৯-এর ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ভোক্তা হচ্ছে সেই ব্যক্তি যিনি পুনঃবিক্রয় বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছাড়া মূল্য পরিশোধ বা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পণ্য ক্রয় করেন। আইনের ২০ নম্বর অনুচ্ছেদে ভোক্তা অধিকারবিরোধী কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে- পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লেখা না থাকা, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ না থাকা, ভেজাল পণ্য ও ওষুধ বিক্রি করা, ফরমালিনসহ ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে খাদ্যপণ্য বিক্রি করা, ওজনে কম দেওয়া, রেস্তোরাঁয় বাসি-পচা খাবার পরিবেশন ও মিথ্যা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণা করা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী অপরাধ। এসব আইনের ব্যত্যয় ঘটলে যেকোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন।
তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় ভোক্তারা যাতে কোনো ধরনের হয়রানি না হয় সেজন্য আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের সচেতন করি। অনিয়ম ধরা পড়লে তাদের জেল ও জরিমানা করা হয় বলে তিনি জানান।