ফুলের প্রতি ভালোবাসার পরিস্ফুটন গদখালী-পানিসারায়

0

সাইফুর রাহমান সাইফ ও তরিকুল ইসলাম ॥ ফুল নিয়ে রচিত হয়েছে কত উপন্যাস, গল্প, কবিতা, নাটক আরও কত কী! কাজী নজরুল ইসলাম তো প্রেমিকের খোপায় তারার ফুল গুঁজে দিতে চেয়েছেন। ফুল হলো ভালবাসার প্রতীক। তাই বলা হয়ে থাকে ফুল যে ভালবাসে না সে মানুষ খুন করতে পারে। ফুলের প্রতি এই ভালোবাসা পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছে এখন ফুলের রাজধানীতে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি ও পানিসারা ইউনিয়ন ফুলের রাজধানী হিসেবে সুপরিচিত। এ খবর এখন দেশের আঙিনা পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই গদখালির ফুলের সুবাস নিতে শীত মৌসুমে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসে হাজারো মানুষ। যার অধিকাংশ তরুণ-তরুণী। এখানকার ফুলের বাগানে ভ্রমরের মতো দিনভর তরুণ- তরুণীর আনাগোনা থাকে। সন্ধ্যে হলে তা আবার মিইয়ে যায়। আবার ডানা মেলে পরদিন সকালে। ১৬ ডিসেম্বর, ১ জানুয়ারি, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২১ ফেব্রুয়ারি, বসন্ত বরণ প্রভৃতি মিলিয়ে ৭টি অনুষ্ঠানকে ঘিরে এখানে জমজমাট আসর বসে। কেউ ঘোরে বাগানের ভেতর, কেউ ফুলের দোকানে। কেউ তোলে সেলফি, কেউ খায় ফুচকা। এভাবে ফুলের রাজ্যে ভিন্ন এক আমেজ তৈরি হয়।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম দৈনিক লোকসমাজকে জানান, ফুলের রাজ্যে সাধারণ্যের এ আনাগোনার সূচনা ২০১২ সাল থেকে। ফি বছর শীত মৌসুমে তা চলছে।
তিনি জানান, বিভিন্ন ন্থান থেকে মানুষ আসে এখানে। তারা সেলফি তোলে, ফুচকা খায়, আনন্দ করে। গত শুক্রবার এখানে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। শনিবারও সমান সংখ্যক লোক আসে। ছুটির দিন হওয়াতে এখানে এতো লোকের সমাগম হয়।
আব্দুর রহিমের কথার মিল পাওয়া যায় ঝিকরগাছা ও যশোর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে। ঝিকরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ টিকিট কাউন্টারের সামনে ভিড় করেছেন। বেতনা এক্সপ্রেসের ফিরতি ট্রেনে তারা গন্তব্যে যাবেন। অথচ ট্রেন আসলে দেখা যায় অনেকেই উঠতে পারেননি। এ ট্রেনে যাত্রীর এতো চাপ এর আগে দেখা যায়নি। একই অবস্থা যশোর রেলওয়ে স্টেশনে।
খুলনাগামী নক্সিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত সাড়ে ৯টার দিকে যশোর রেলওয়ে স্টেশনে আসে। এ সময় কয়েক হাজার যাত্রীকে গাদাগাদি করে ট্রেনে উঠতে দেখা যায়।
স্টেশনের টোঙ দোকানদার সেলিম হোসেন দৈনিক লোকসমাজকে বলেন, বিকেলের পর যতগুলো ট্রেন এসেছে সবগুলোতে এমন ভিড় ছিল। একই কথা জানান বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত নক্সিকাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনের ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার বা টিটিই শাবিব হোসেন, মঞ্জুরুল হক ও লিটন পাল। তারা জানান, তাদের ট্রেনে দুদিন অস্বাভাকি ভিড় ছিল।
যশোর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন তাসনুভা করিম। তিনি বলেন, খুলনা থেকে এসেছি। গিয়েছিলাম গদখালিতে। ফুল দেখতে।
আবু হানিফ নামে এক যুবককে দেখা যায় ফুল হাতে ঘুরতে। তিনি জানান, একেকটি জারবেরা কিনেছেন ৩০ টাকা করে।
আব্দুর রহিমের আশা এবার ৭টি অনুষ্ঠানকে ঘিরে শত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। তিনি জানান, এখন প্রতিটি সাধারণ গোলাপ ১৮ থেকে ২০ টাকা, চায়না গোলাপ ৩০ টাকা ও জারজেরা ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।