জীবননগরে নার্সিং হোমের ভেতরে সেবিকা খুন, স্বামী আটক

0

 

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা॥ চুয়াডাঙ্গা জীবননগর উপজেলা শহরে মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারের ভেতরে একজন সেবিকাকে তার স্বামী ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছেন। এ ঘটনার আড়াই ঘন্টা পর ঘাতক স্বামীকে আটক করে পুলিশ। হত্যাকান্ডটি ঘটে শনিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে। পুলিশ এ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ধারালো ছুরি ও ঘাতক স্বামীর পরনের রক্তমাখা জামা ও প্যান্ট জব্দ করেছে।
হত্যাকান্ডের শিকার হাফিজা খাতুন (৩৮) জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের সমসের আলীর মেয়ে এবং হত্যাকারী কবির হোসেন একই উপজেলার বালিহুদা গ্রামের জেকের আলীর ছেলে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল-আজাদ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানান, ঘটনার পর মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মরত লোকজন ও পথচারীরা গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় হাফিজা খাতুনকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাগবির হাসান তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর পুলিশ বেশ তৎপর হয়ে ঢাকা শহরে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতির সময় ওই দিন রাত সোয়া ১১টার দিকে জীবননগর উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে ঘাতক কবির হোসেনকে আটক করতে সক্ষম হয়। এ ব্যাপারে হত্যাকান্ডের শিকার হাফিজার পিতা সমসের আলী বাদি হয়ে জীবননগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরো জানান,আটক হত্যাকারী কবির হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তার স্ত্রী হাফিজা খাতুনের আনুমানিক ২৫ বছর আগে জনৈক শহিদুলের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাদের সাংসারিক জীবনে দুটি সন্তান রয়েছে। আগের পক্ষের মেয়ের বয়স অনুমান ২৩ বছর এবং ছেলের বয়স অনুমান ১৫ বছর। সাংসারিক জীবনে প্রথম স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আনুমানিক ১২ থেকে ১৩ বছর আগে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। হাফিজা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে নার্স হিসেবে কাজ করতেন এবং দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটারের পাশের ঘরে তিনি থাকতেন। তিনি নার্সিং হোমে চাকরি করাকালে নার্সিং হোমে টাইলস মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করার সময় তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর হাফিজা মা নার্সিং হোম অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই থাকতেন। সেখানেই তিনি মাঝে মাঝে আসা- যাওয়া করতেন এবং সাংসারিক খরচ দিতেন। কিছুদিন ধরে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হাফিজা খাতুনকে সন্দেহ করতেন এবং মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ঝগড়া- বিবাদ হতো। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে স্বামী নার্সিং হোমে আসলে সাংসারিক বিষয় নিয়ে তাদের দু’জনের মাধ্যে কথা কাটাকাটিসহ তুমুল ঝগড়া হয়। এদিন রাত অনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে তিনি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হাফিজার ঘরে প্রবেশ করেন। হাফিজা বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় তিনি তার গলার বাম পাশে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। ঠেকাতে গেলে তার বাম হাতের কব্জির ওপরে কেটে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যান স্বামী। এ সময় হাফিজা নিজেকে বাঁচানোর জন্যে দ্বিতীয় তলা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় নিচ তলার দরজা পর্যন্ত চলে এসে সেখানে পড়ে যান। তখন আশপাশের লোকজন ও মা নার্সিং হোমে কর্মরত আয়া বিউটি খাতুনসহ আরো অনেকে ছুটে এসে হাফিজাকে চিকিৎসার জন্যে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানেই মারা যান তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দিন আল-আজাদ আরো জানান,ঘাতক কবির হোসেনকে রোববার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করলে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। এরপর আদালতের বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানো আদেশ দেন।