রাজনৈতিক বন্দীতে ভরা কারাগারগুলো এখন আলোচনার শীর্ষে

0

 

বাংলাদেশের কারাগারে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী রাখা হচ্ছে এ সরকারের আমলে। রাজনৈতিক ধরপাকড়ে সংখ্যা এত বেড়েছে যে, কিছু কারাগারে এখন দ্বিগুণের বেশি বন্দী রাখতে হচ্ছে। এ নিয়ে মানবাধিকার ক্ষুণেœর অভিযোগ এলেও সরকার তাতে গা না করে বিরোধীদের গণহারে বন্দী করছে।
একটি জাতীয় দৈনিক কারাগারে গাদাগাদি করে বন্দী রাখার বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছে। কারা অধিদফতরের বরাতে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৫ নভেম্বরের হিসাবে দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা ৪৩ হাজারের কম। তাতে রয়েছেন প্রায় ৮৮ হাজার বন্দী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর সংসদে জানিয়েছিলেন, কারাগারে বন্দী ৭৭ হাজারের মতো। অধিদফতরের হিসাবে এখন বন্দীর সংখ্যা ১০ হাজার ৬০৯ জন বেশি।
বর্তমান সরকারের আমলে প্রকৃত অপরাধীর তুলনায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর লাল দালানে আশ্রয় হয়েছে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বন্দীর সংখ্যা বিপুল বৃদ্ধির কারণ, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ধরপাকড়। ওই দিনের পর দলটির আট সহস্রাধিক নেতাকর্মী আটক হন। জামায়াতসহ অন্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদেরও উচ্চহারে আটক করছে সরকার এই সময়ে। কিছু কারাগারের ধারণক্ষমতার আড়াইগুণ-তিনগুণ বন্দীও রাখা হচ্ছে। কারাবিধি অনুযায়ী, একজন বন্দীর থাকার জন্য ন্যূনতম ছয় ফুট দৈর্ঘ্য ও ছয় ফুট প্রস্থের জায়গা থাকতে হবে।
দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। ঢাকায় কারাগারে বন্দী ধারণক্ষমতা ১৩ হাজার ৪২১, আছেন ৩০ হাজার ৮১১ জন। এখানে একজন বন্দী রাখার মতো জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৩ জনকে। চট্টগ্রামে ধারণক্ষমতা ছয় হাজার ৯৫০, আছেন ১৭ হাজার ২৩৫ জন। এ জেলায় একজনের জায়গায় রাখা হচ্ছে ২ দশমিক ৪৭ জনকে। রাজশাহীতে ধারণক্ষমতা চার হাজার ১৭৯, আছেন ১৩ হাজার ৫৯৮ জন। এখানে সর্বাধিক তিনজনের বেশি বন্দীকে একজনের জায়গায় গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। বন্দীদের মধ্যে হাজতির সংখ্যা বেশি। তাদের বিচার শেষ হয়নি। মূলত তাদের মধ্যে এমন মানুষ বেশি যাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আছে। সরকার তাদের শত্রু গণ্য করছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক হওয়া বেশির ভাগ নাগরিককে ঠুনকো অভিযোগে আটক করে রাখা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরা জামিন পাননি, তার বিচারও শেষ হয়নি। এ ধরনের বিতর্কিত আইনে আটকদের বিরুদ্ধে আমাদের বিচারব্যবস্থা অত্যন্ত কঠিন। অপর দিকে, খুনের মামলার আসামির সাজা কমিয়ে দেয়া হয়, কখনো মওকুফ করা হয়। তাদের জামিনও মিলছে।
দেশের কারাগারের ধারণক্ষমতা কম বলা যাবে না। শুধু প্রকৃত অপরাধীদের রাখা হলে ঠাসাঠাসি করার দরকার হতো না; বরং ধারণক্ষমতার তুলনায় কম বন্দী সেখানে রাখতে হতো। এ অবস্থায় বাংলাদেশের কারাগার একটি নিপীড়নকেন্দ্র এবং আরেকটি অপরাধ সংঘটনের জায়গা হয়ে গেছে। বিগত বছরগুলোতে কারাপ্রশাসনের উচ্চ দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর পাওয়া গেছে, অর্থাৎ বিপুল বন্দী নিয়ে তারা এক ধরনের অবৈধ বাণিজ্য চালাচ্ছে। নেই সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থাও।
কারাগারকে আমরা অপরাধীদের সংশোধনাগার হিসেবে দেখতে চাই। সেখান থেকে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হোক।