দেশের চলমান মারাত্মক রাজনৈতিক সংকটে জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের গভীর উদ্বেগ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ দেশের চলমান মারাত্মক রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে গত ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক সমাবেশে পরিকল্পিতভাবে হামলা করে সমাবেশ প- করা এবং বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীসহ নাগরিকদের প্রাণহানি করার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা, গ্রেফতার ও আটকের সংবাদে রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত।
৫ নভেম্বর রাতে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রাজনৈতিক বিরোধিতা, সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার যা সাংবিধানিকভাবে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত ও নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদল ও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চরম অনিশ্চয়তা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতীত কোনো দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে, গত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন তার বলিষ্ঠ প্রমাণ, যাতে যথাযথ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক মতামত ও সম্মতির প্রতিফলন ঘটেনি। উচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও কোনো গণভোট ব্যতীত সম্পূর্ণ একতরফাভাবে সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচনী ব্যবস্থাটিকে কার্যত প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি এখন জনগণের ন্যূনতম আস্থা নেই। প্রশাসনের সর্বস্তরে স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে এবং নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর ন্যূনতম পরিবেশ অবশিষ্ট নেই।
এমতাবস্থায়, জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদ মনে করে যে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য সরকারকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বেই রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে সংলাপ করে একটি নির্দলীয় অন্তর্র্বতীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কিংবা রাজনৈতিক জোট/দলগুলির ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা করতে পারে।
বর্তমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে এর বাইরে কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করি না।
বিরোধী দলগুলির শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কার্যক্রমে কোনরূপ বাঁধার সৃষ্টি না করে এবং আটককৃত বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে অনুকূল ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলে তারা মনে করেন।
বিবৃতিদাতারা হলেন-
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও রাজনীতি বিজ্ঞানের (অব.) অধ্যাপক ড. সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক (অব.) এম. সলিমুল্লাহ খান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পলিটিক্যাল স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এনায়েতল্লাহ পাটোয়ারী ড. মো. সফিকুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক ফজল, জগন্নাথ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজবাহ-উল আজম সওদাগর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফকরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক এ জি এম নিয়াজ উদ্দীন, নিরাপত্তা বিষয়ক বিশ্লেষক জিয়া হাসান, শান্তা মরিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান প্রমুখ।