দাম না পেয়ে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় যশোরের পাটচাষি

0

 

আকরামুজ্জামান ॥ পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়লেও ন্যায্য দাম পাচ্ছে না যশোরের চাষিরা। এবছরও বাজারদর নিম্নমুখী হওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না তারা। এতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে হাজার হাজার কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের তথ্যমতে, জেলায় চলতি মৌসুমে ২৫ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল পাটের আবাদ হয়েছে। অথচ এবার পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৫ হাজার ২শ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত জমিতে পাটের আবাদ হওয়ার পাশাপাশি ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক পাট বিক্রি করে লাভবানের আশা করছিলেন। কিন্তু বাজারে কাঙ্খিত দাম না পেয়ে তারা হতাশ হচ্ছেন।
কৃষকরা বলছেন, পাট চাষের শুরুর দিকে কাঙ্খিত বৃষ্টি পেলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে যশোরাঞ্চলে অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। এতে সেচ নির্ভর হয়ে পাট চাষে খরচ বেড়ে যায়। এমনিতে সার-কীটনাশক, শ্রম খরচও আগের চেয়ে বাড়তি ছিলো। অন্যদিকে পাট কেটে জাগ দিতেও বাড়তি শ্রমিক খরচ হয়েছে তাদের। অনাবৃষ্টিতে খাল-বিলে পানি না থাকায় দূর-দূরান্তে যেখানে পানি ছিলো সেখানে জাগ দিতে খরচ বেড়েছে। এতে উৎপাদন খরচ যেমন বেড়েছে সে তুলনায় বাজারে পাটের দাম পাওয়া যাচ্ছেনা বলে তারা অভিযোগ করেন।
জেলার মনিরামপুর এলাকার বেগারিতলার চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, পাট চাষের সময় এবার নানা বিড়ম্বনার শিকার হন তারা। প্রথমত বীজ বপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন। অন্যদিকে বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, পানি সেচ শ্রমিক খরচ, জাগ দেওয়া, আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। অথচ মৌসুমের শুরুতে বাজারে পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ। অথচ গত বছরে এই পাট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা বিক্রি হয়।
যশোরাঞ্চলে পাটের যে কয়টি মোকাম রয়েছে তার মধ্যে জেলার খাজুরা বাজার ও পাশের উপজেলা শালিখার সীমাখালী বাজার। এই দুটি বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী জহির হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি বাজার থেকে তিনি পাট কিনে খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান। কিন্তু এবছর বড় বড় মোকামে বেচাকেনা না থাকায় পাটের দাম কমে গেছে। মোকামে চাহিদা না বাড়লে পাটের দাম বাড়বে না বলে তিনি জানান। গত বছরের পাট এখনো গোডাউনে আছে বলে তিনি জানান।
বান্দা বিশ্বাস নামে আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, সীমাখালী পাটের মোকামে পাটের তিন ধরনের দাম রয়েছে। ভালো মানের পাট যেগুলোকে আমরা এ গ্রেড বলে সেগুলো ২২শ টাকা মণ, বি-গ্রেডের ১৯শ থেকে ২ হাজার ও সি গ্রেডের মানের পাট ১৮শ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, এবছর পাট জাগ দেওয়ার উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় পানির অভাবে জাগ দেওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন কৃষক। যেকারণে যত্রতত্র জায়গায় তারা পাট দেওয়ার কারণে পাটের তেমন কোনো মান নেই। এ কারণে এ গ্রেডের পাটের খুবই সংকট। অথচ মিলগুলোতে এ গ্রেডের পাটের চাহিদা বেশি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এবছর আমাদের জেলার চাষিরা পাটের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে শেষ সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না পেয়ে কিছুটা সংকটে পড়েন তারা। তিনি বলেন, পাটের দাম আপাতত কিছুটা কম হলেও খ্বু দ্রুত সময়ে দাম বেড়ে যাবে বলে আশা করছি আমরা। দাম বাড়লে কৃষক লাভবান হবে এবং ভবিষ্যতে জেলায় পাট চাষির সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি দাবি করেন।