বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের লেখা খোলা চিঠির তাৎপর্য

0

 

সুজায়েত শামীম সুমন ।। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো নোবেলজয়ী শতাধিক বরেণ্য ব্যক্তি সহ ১৬০ বিশ্বনেতার খোলাচিঠির বিষয়ে ইতিমধ্যে অবগত হয়েছেন দেশবাসী। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী চিঠির সার্বিক বিষয়ের ওপর সমর্থন জানিয়ে আরও ১৫ জন বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তি তাদের নাম প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট একটি ওয়েবসাইটে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নিজেদের সম্মতি জ্ঞাপন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত খোলা চিঠিতে উল্লেখ থাকা বেশকিছু লাইনকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বিচারিক হয়রানি এবং মানবাধিকার প্রসঙ্গে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিরা এতটা পরিস্কারভাবে কখনও তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। ইতিপূর্বে অর্র্থাৎ গেলো মার্চে ৪০ বিশ্বনেতা শান্তিতে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া, তাঁকে নিজ নিরাপত্তায় ব্যস্ত রাখার পরিবর্তে দেশ ও বিশ্বের জন্য আরও ভালো কিছু করার শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেওয়াসহ তাঁর অবদানের নানা বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। তবে এবারের চিঠি বহন করছে ভিন্ন বার্তা।
বিষয়বস্তুর সাথে সঙ্গতি রেখে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিরা এমন কিছু বক্তব্য সরাসরি তুলে ধরেছেন; যা নিঃসন্দেহে সরকারের চিন্তার পারদ উর্ধ্বমুখী করে তুলবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। বিশেষ করে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী দলের চলমান এক দফা আন্দোলন এবং নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে বিদেশিদের চাপের মধ্যে এই ‘খোলা চিঠি’ যেন ‘আগুনে ঘি ঢালার’ মত অবস্থা বলেই মনে করা হচ্ছে। একই সাথে খোলা চিঠি চলমান এক দফা আন্দোলনের সাথে সর্ম্পৃক্ত সকলের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
চিঠির বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ লাইন থেকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে গেছে যে এ রাষ্ট্রের জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এখন আর একা নন। নির্বাচন কেন্দ্রিক যে সমস্যাটি বাংলাদেশে দীর্ঘ কালব্যাপী বিরজমান, সেটি কেবল দেশের অভ্যান্তরীণ বিষয় নয়; বরং গোটা বিশ্ব বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকার তাগিদ অনুভব করছে। বিশেষ করে জনগণের মর্যাদা এবং ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার এই চলমান আন্দোলনেরর স্বপক্ষে পরোক্ষ বার্তা রয়েছে চিঠিতে উল্লেখিত তিনটি লাইন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, চিঠির বিষয়বস্তু প্রফেসর ড. ইউনূসের বিচার স্থগিতের ওপর জোর দেয়া হলেও সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং মানবাধিকার প্রসঙ্গে পরিস্কার ভাবে উল্লেখ করেছেন বিশ্ব নেতারা; যা জনগণের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
এই চিঠি প্রমাণ করে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পূর্ণ প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসন নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে মানবজাতির কল্যাণে কার্যকরী ভূমিকা রাখা বিশ্বের মেধাবী মুখগুলো যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছেন। এবং প্রতিটি বিষয় যে তাঁরা পর্যবেক্ষণ করছেন, সেটিও উঠে এসেছে লেখার শেষাংশে। কেননা প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া এই চিঠির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ প্রতিটি বিষয়ে আগামীতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে; সেটিও যে তাঁরা পর্যবেক্ষণ করবেন তা পরিস্কারভাবে তুলে ধরেছেন।
চিঠিতে উল্লেখ থাকা একটি অনুচ্ছেদে তাঁরা সরাসরি বলেছেন, “The previous two elections lacked legitimacy” অর্থাৎ আগের দুটি নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল। এখানে তারা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের বৈধতার বিষয়টি সরাসরি ইঙ্গিত করেছেন। এবং এই কথার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে এই সরকারের অধীনে বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন সহ স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিটি নির্বাচনের সার্বিক চিত্র সম্পর্কে তাঁরা অবগত।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন পদার্থবিজ্ঞান, ফিন্যান্স, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য ও শান্তিতে বিভিন্ন সময়ে নোবেল প্রাইজ পাওয়া শতাধিক ব্যক্তি এবং রাজনীতি, কূটনীতি, শিল্পকলা ও আন্তজার্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন মানবাধিকার এবং দাতা সংস্থার বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। বিশ্ব জুড়ে তাঁরা কেবল গ্রহণযোগ্য মানুষ নন; যে কোন রাষ্ট্রের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রয়েছে তাদের সরাসরি ভূমিকা। প্রতিটি ব্যক্তি নিজ নিজ রাষ্ট্রের সরকার এবং সর্বস্তরের মানুষের কাছে সম্মানীত ও গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি।
চিঠিতে উল্লেখ থাকা অনুচ্ছেদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনে প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্র্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই কৌশলে তথা রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচন করার প্রচেষ্টাকে বিশ্ব নেতারা যে সমর্থন করেন না; সেটি ফুটে উঠেছে উপরোক্ত লাইনের মধ্য দিয়ে।