জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় ফিরবে নাগিরক মর্যাদা

0

 

 

সুজায়েত শামীম সুমন ।। ইংরেজীতে সিটিজেন শব্দের অর্থ হলো নাগরিক; যাদেরকে রাষ্ট্র সম্মান করে, মানুষ হিসাবে গণ্য করে এবং সকল মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করে। সুতরাং যে কোন সভ্য এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে নাগরিকের গুরুত্ব অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। এখানে “অস্বীকার” শব্দটি মূলত দেশের নাগরিকের প্রতি দেশ পরিচালনাকারীদের অবজ্ঞা বা জনগণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বিশ্ব ইতিহাসের দিকে নজর দিলে দেখা যায় এক সময় রাষ্ট্র বা রাজ্য বলে কিছু ছিল না। জোর যার মুল্লুক তার। সবল দুর্বলকে শাসন করতো। কিন্তু মানুষ ধীরে ধীরে বিষয়টি বুঝতে পেরে সবলের বিরুদ্ধে সংগঠিত হতে শুরু করে। এবং তখন থেকেই রিপাবলিকের ধারণা মানুষের চিন্তা চেতনায় গেথে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নাগিরক মর্যাদা।’
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রের মৌলিক উদ্দেশ্য হলো একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য সমতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা থাকবে। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের ক্ষমতার চুড়ান্ত মালিক হিসাবে জনগণকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অধীনে অনুষ্ঠিত বিগত দুটি সংসদ নির্বাচন সহ স্থানীয় পর্যায়ের কোন র্নিবাচনে সেই স্বীকৃতির প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়নি।
‘ক্ষমতার চুড়ান্ত মালিক জনগণ’ – এ কথাটির সহজ প্রতিফলন আমরা কীভাবে বুঝবো?
বিষয়টি অতি সাধারণ। মানুষ উৎসবমুখোর পরিবেশে ভোটের মাঠে যাবে, নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে এবং জনগণের ভোটে বিজয়ী রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করবে। ব্যাপারটা একেবারে জলের মত পরিস্কার। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন ঘটিয়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলাম ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একমত হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে ১৯৯০ সালের ৯ ডিসেম্বর তত্বাবধায়ক সরকারের ১৭ জন উপদেষ্টা শপথ গ্রহন করেন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় র্নিদলীয় এবং নিরপেক্ষ তত্ববধায়ক সরকারের অধীনে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই ছিল সবচেয়ে বেশি গ্রহনযোগ্য নির্বাচন। সেবার সরকার গঠন করে বিএনপি। যদিও পরবর্তিতে তারা তত্বাবধায় সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এককভাবে ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। এবং সরকার গঠন করলেও ১৯ মার্চ ১৩ তম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। এবং এই প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ এবং পরবর্তিতে ফের বিএনপি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। এবং সেটির ধারাবহিকতায় অর্থাৎ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তারাই আবার ২০১১ সালের জুন মাসে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে।

র্নিদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের এই স্বচ্ছ বিষয়টিকে শুধু জটিল করে তোলা হয়নি বরং জনগণকে সম্পূর্ণরূপে পাশ কাটিয়ে, ভোটাধিকার ক্ষুন্ন করে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল শক্তি ব্যবহার করে যেভাবে নিজেদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ; তা এক কথায় নাগরিক মর্যাদাকে ভুলুণ্ঠিত করার সামিল। জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে বা তাদের অংশগ্রহন ছাড়াই কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায়; সেটি বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করিয়ে দেখিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এবং এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে তাদের বিশ্বাসের জায়গাটি কেবল নষ্ট করেনি; দেশের মানুষকে প্রকারন্তে অস্বীকার করেছে। সহজ কথা হলো পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ থেকে জনগণকে বঞ্চিত করার অর্থ হলো গোটা দেশের সাধারণ নাগরিককে গুরুত্বহীন কাতারে নিক্ষেপ করা। মূল্যহীন হিসাবে বিবেচনা করা। এবং একই সাথে নিজেদের পরাজয় মেনে নেয়ার মত সৎ সাহস ও দৃঢ় মানসিকতার ঘাটতি।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য হিসাবে বিবেচিত হন। বাকি আসনগুলোতেও বাস্তব অর্থে কোন ভোট হয়নি বা ভোটারের উপস্থিতি ঘটেনি। বরং সারা দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর মতে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত টানা ৪১ দিনে সারা দেশে রাজনৈতিক সংঘাত ও সংঘর্ষে মারা যান ১২৩ জন। এবং সেই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন এতটাই গতিশীল ছিল যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কোনঠাসা হতে থাকে শাসকগোষ্ঠীর বিভিন্ন স্তরের লোকজন। রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল শক্তি ব্যবহার করেও পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় সরকার। অবস্থা বেগতিক দেখে তৎকালীন সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিরোধী দলের দাবি মেনে নিয়ে অচিরেই সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়। এবং এরই প্রেক্ষিতে বিরোধী দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চলমান আন্দোলন থেকে সকলকে ঘরে ফিরে আসার আহবান জানান। সাধারণ মানুষও সেই আহবানে সাড়া দেন। কিন্তু পরবর্তিতে শাসকগোষ্ঠী সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা তো দূরে থাক; প্রসঙ্গক্রমে কোন ধরণের আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপিত হলে তা কৌশলে এড়িয়ে যান বা স্বীকার করেন না। দুঃখজনক হলেও সত্য সেই নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত গণতান্ত্রকামী মানুষের লাশ মাড়িয়ে রক্তে রঞ্জিত দু হাতে সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ বাক্য পাঠ করেন ভোটারবিহীন একক নির্বাচনের প্রার্থীরা। বিশ্বের ইতিহাসে কোথাও নির্বাচন কেন্দ্রীক এত মানুষের নিহত হওয়ার কোন দৃষ্টান্ত নেই।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিশ্বের ১০৭ টি দেশের ১২৭ টি নির্বাচনের ওপর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ইলেক্টোরাল ইন্টিগ্রিটি প্রজেক্ট নামে একটি জরিপ পরিচালিত হয়। সেখানে পারসেপশন অব ইলেক্টোরাল ইন্টিগ্রিটি- পিটিআই অর্থাৎ নির্বাচনী সততার ধারণা সূচকে বাংলাদেশে নিচের দিক থেকে ১৪ তম স্থানে ছিল।
২০১৮ সালে একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভিন্ন কৌশলে অবতীর্ণ হয়। এবং যে কোনভাবেই ক্ষমতায় টিকে থাকতে অসংখ্য পরিকল্পনা, উপ পরিকল্পনা এবং পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কোন পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে সেটিরও বিকল্প ভাবনা প্রস্তুত রেখে তারা তাদের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। যদিও তফসিল ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যে শাসকগোষ্ঠীর কৌশলগত কিছু বিষয় পরিস্কার হয়ে গেলেও বিএনপি এবং তাদের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা সকল ধরণের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ভোটের দিন পর্যন্ত টিকে থাকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। প্রচার প্রচারণা চলাকালে সারাদেশে লাখ লাখ নেতা কর্মীকে বিভিন্ন মামলায় আটক দেখিয়ে কারাবন্দী করা হয়। নির্বাচন কমিশনে বারবার অভিযোগ দেয়ার পরও বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পরিস্থিতি এমন করে তোলা হয় যে প্রার্থীর পাশে থাকার মত কোন নেতা কর্মী শেষ পর্যন্ত যেন অবশিষ্ট থাকতে না পারেন।
বাস্তবতা হলো এ দেশের মিডিয়াকর্মী থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসন, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারি তথা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভোটের দিন যারা মাঠে ছিলেন তারা সকলে নির্বাচনের বাস্তবতা নিয়ে কম বেশি অবগত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন নিজ ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেদিন পেশাগত নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন তাদের অনেকে।

তবে বিগত দুটি নির্বাচনের মত এক চেটিয়া ভোটের ব্যবস্থা এবার সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। যদিও সেই লক্ষ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ১৯ আগস্ট হবিগঞ্জে বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশের গুলিবর্ষণ এবং টিয়ার সেল নিক্ষেপের ঘটনায় তিন শতাধিক আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন একাধিক নেতা কর্মী। অপরদিকে নারায়নগঞ্জে পদযাত্রা শুরুর আগে থেকেই বিভিন্ন পয়েন্টে নেতা কর্মীদের আটক করতে শুরু করে পুলিশ। নেতা কর্মীরা কাঁচপুরে একত্রিত হয়ে পদযাত্রা শুরু করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। অপরদিকে শনিবার থেকে রাজধানীতে নিখোঁজ থাকা জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের শীর্ষ ৬ নেতাকে নাশকতার অভিযোগ তুলে অস্ত্রসহ আটক দেখানো হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যত ধরণের শক্তি প্রয়োগ এবং অমানবিক হতে হয়; সেটির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শাসকগোষ্টী। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সহ রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে বা জনগণের দাবির মুখে তারা নিরপেক্ষ ভূমিকায় আসতে বাধ্য হবেন বলেই মনে করেন রাজনৈতিক অঙ্গনের মানুষ। অবশ্য এটির পেছনে বিশেষ তিনটি কারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে প্রতিয়মান হয়েছে। প্রথমত এক দফা আন্দোলনের সকল কর্মসূচিতে তৃণমূল থেকে রাজধানী পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের নেতা কর্মীরা নিজেদের সক্রিয়তা বজায় রেখে পূর্ণ উদ্যোমে রাজনীতির মাঠে থাকছেন। এবং সংখ্যাটি হাজার হাজার নয়; বরং তা লাখ লাখ। দ্বীতিয়ত বিএনপির মিছিল সমাবেশে সাধারণ মানুষের আকাঙ্খার বার্তা প্রকম্পিত হচ্ছে; যা বিএনপিকে আরও সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছে দিয়েছে এবং তৃতীয়ত হলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সহ বর্হি বিশ্বের  চাপ। যদিও আগামী ৯ সেপ্টম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লিতে জি ২০ ভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে একত্রে দেখা হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেখানে জি ২০ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব, অর্থনৈতিক এবং পরিকাঠামো গত উন্নয়ন নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা হবে। এই আলোচনার ফাঁকে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার মধ্য দিয়ে মার্কিন মনোভাবের ইতিবাচক পরিবরর্তনের প্রত্যাশা যে সরকার করছে না; তা অমূলক নয়। যদিও এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রদানের পর হুট করে নমনীয়তা প্রদর্শন বা রাতারাতি মনোভাব পরিবর্তনের কোন দৃষ্টান্ত কারোর ক্ষেত্রে সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কখনও দেখা যায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখনই কোন রাষ্ট্রের কতিপয় ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে; যখন ওই দেশটির আচরণে পরিবর্তন দেখতে চায়। এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যেমন কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মাানি, অস্ট্রেলিয়ার মত দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে।
যদিও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ‘বিদেশী চাপ’কে বিএনপি সহায়ক হিসাবে মনে করলেও দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ‘জনগণ এবং রাজপথ’ – এ দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই তারা এগিয়ে চলেছে। এবং রাজনীতির মাঠে বিএনপির পরিপক্কতা যে চোখে পড়ার মত পরিবর্তন ঘটেছে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির নেতা কর্মীরা অগণিত মামলায় কারাবরণ করতে করতে এবং দিনের পর দিন নানা প্রক্রিয়ায় নির্যাতন সহ্য করার মধ্য দিয়ে ‘মৃত্যুভয়’ কে তারা এমন ভাবে জয় করতে পেরেছেন যে; এসব কোন কিছু দিয়ে তাদের মনোবল ভেঙে দেয়া বা রাজনীতির মাঠে দূর্বল করে দেয়া আগের মত সহজ হচ্ছে না। একই সাথে মিছিল সমাবেশে জনগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এই চলমান স্রোত বিএনপির সকল স্তরের নেতা কর্মীর আত্মবিশ্বাস, সাহস ও দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে তুলেছে আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
গেলো ১১ আগস্ট ঢাকার রাজপথে বিএনপির গণ মিছিলের দৈর্ঘ্য এবং লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি দেখে সহজে অনুমান করা গেছে, অংশগ্রহনকারী সকলে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সমর্থক নন। এরমধ্যে কম করে হলেও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছিলেন সাধারণ মানুষ। বাকিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং সমর্থক। বাস্তবতা হলো স্বভাবগত ভাবে মানুষ কখনও ফ্যাসিবাদ পছন্দ করে না। সেটা ঘরে,বাইরে, রাষ্ট্রে, কর্মস্থলে; এমনকি সংসার জীবনে।
মানুষ কি কেবল ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার প্রয়োজনে বিএনপির এই এক দফা আন্দোলনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছেন?
যদিও ভোটাধিকার তথা নাগরিক মর্যাদার প্রশ্নে এটি অন্যতম কারণ; তবে এটি ছাড়াও আন্দোলনে মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশ গ্রহনের পেছনে রয়েছে আরও অজস্র যৌক্তিক বিষয়। সেগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। বরং প্রসঙ্গক্রমে প্রবাদপ্রতিম শিক্ষক ও দার্শনিক অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ “প্লেটোর রিপাবলিক” বইয়ের “কতিপয়তন্ত্র এবং কতিপয়তন্ত্রী চরিত্র” অধ্যায়ের একটি অনুচ্ছেদের কয়েকটি লাইন তুলে ধরলে বাকিটুকু পরিস্কার হয়ে যাবে।
তাঁর সেই বিখ্যাত বইয়ের ২১ তম অধ্যায়ে বলা আছে, “উচ্চাভিলাষতন্ত্র কালক্রমে সম্পদকে সম্মান ও শক্তির কেন্দ্র বলে মনে করে, জ্ঞানকে নয়। ফলে শাসকরা ব্যক্তিগত সম্পত্তি জড়ো করতে শুরু করে। আর এই সম্পদের লোভ যখন শাসককে পরিপূর্ণরূপে গ্রাস করে তখনই কতিপয়তন্ত্রের উদ্ভব হয়। সম্পদ যেখানে লক্ষ্য, সেখানে শাসন কতিপয়ের হাতে সীমাবদ্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। কারণ সকলেই চাইবে সর্বাধিক পরিমাণ সম্পদ সংগ্রহ করতে। এই প্রতিযোগিতায় দুর্বলরা ক্রমান্বয়ে নিঃশ্ব হবে এবং সবলরা ধনবান হবে।
কতিপয়তন্ত্রের প্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্র হচ্ছে সম্পদ এবং সম্পদবান ব্যতীত অপর কিছুর মূল্যদানে অক্ষম। অর্থের লিপ্সা তার অন্তরে সম্রাট। যুক্তি এবং আকাঙ্খা সেই সম্রাটের পদপ্রান্তে দাস।”