অস্বাভাবিক ইজারা মূল্য দিয়ে কষ্টে আছে চৌগাছার খড়িঞ্চা বাঁওড়ের জেলে পরিবার

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার খড়িঞ্চা বাঁওড় পাড়ের জেলেরা ভালো নেই। দিনদিন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বাঁওড়। খরা মৌসুমে থাকছে না পানি, অস্বাভাবিক লিজের টাকা দিতে হয় সরকারের ঘরে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করছেন।
উপজেলা সদরের পশ্চিমে অবস্থিত খড়িঞ্চা বাঁওড়। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আর ২৮১ একর জলাকার নিয়ে বাঁওড়ের অবস্থান। বাঁওড়কে কেন্দ্র করে খড়িঞ্চা, দেবুলা ও মাধবপুর এই তিনটি গ্রামে কয়েক শ জেলে পরিবারের বসবাস। এসব গ্রামের জেলের রোজগারের একমাত্র মাধ্যম খড়িঞ্চা বাঁওড়।
সম্প্রতি জেলে পল্লীর একাধিক জেলের সাথে কথা বলে তাদের কষ্টের কথা জানা গেছে। দেবুলা বাঁওড় পাড়ের একটি গ্রাম। এই গ্রামের মঙ্গল হালদার (৫৫), একই গ্রামের বছির হালদার, সাধন হালদার, আনন্দ হালদার, বাদল হালদারসহ একাধিক জেলে বলেন, এই বাঁওড়ই আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়। বাঁওড়ে যদি মাছের ভালো চাষ হয় তাহলে আমরা ভালো থাকি আর যদি কাক্সিক্ষত মাছ না হয় তাহলে কষ্টের কোনও শেষ নেই।
খড়িঞ্চা গ্রামের অরবিন্দু হালদার, একই গ্রামের তপন হালদার, শান্তি হালদার, জুগোল হালদার জানান, যুগযুগ ধরে বাঁওড় পাড়ের জেলেরা বাঁওড়ে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বিগত বছরের চেয়ে গত কয়েক বছর বাঁওড় অস্বাভাবিক টাকা দিয়ে লিজ নিতে হচ্ছে। এতে করে লাভ হওয়া খুবই কষ্ট। আমরা যারা মালিক তারাই শ্রমিক, দিন-রাত নেই নিদারুন কষ্ট করি বাঁওড়ে। জাল দড়া নিয়ে সকালে পানিতে নামি আর সন্ধ্যা হলে উঠে আসি। একদিন দুদিন না, মাসের পর মাস চলে এই কষ্ট। মাধবপুর গ্রামের উত্তম হালদার, একই গ্রামের রনজিত হালদার, সুবোল হালদারসহ একাধিক জেলে বলেন, আমরা যে পরিশ্রম করি, সেই পরিমাণ পারিশ্রমিক হয় না, তারপরও কিছুই করার নেই, কারণ ছোটবেলা হতে বাবা কাকাদের হাত ধরে বাঁওড়ে এসেছি, শিখেছি নৌকা চালাতে আর মাছ ধরতে। দুই দশক আগেও বাঁওড়ে বছরের বারো মাস পানি থাকতো, ভালো মাছ চাষ হয়েছে, তখন সরকারি ইজারার মূল্য ছিলো কম। কিন্তু এখন বাঁওড়ে পানি থাকে না, মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি অনেক অংশে কমে গেছে অথচ কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে বাঁওড় লিজ নিতে হচ্ছে।
খড়িঞ্চা মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভরত কুমার বিশ্বাস কিছুটা আবেগজড়িত কন্ঠে বলেন, খড়িঞ্চা বাঁওড় তিনটি গ্রামের জেলেদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বর্তমানে বাঁওড়ের ইজারা অনেক বেড়ে গেছে, ভ্যাট আইটি দিয়ে বছরে প্রায় ৬২ লাখ টাকা সরকারকে দিতে হচ্ছে। যা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক।
সংগঠনের সভাপতি লক্ষণ বিশ্বাস বলেন, তিন গ্রামের ১৩৪ জন সদস্য নিয়ে আমার সমিতি। আমরা সকলেই জেলে আবার সকলেই বাঁওড়ের মালিক। বাঁওড়ের ইজারা মূল্য কম হলে আমাদের জন্য ভালো হতো। অজানা শংকা নিয়ে মাছ চাষ করি প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ মাছে মড়ক লাগলে সব শেষ। ঘূর্ণিঝড় আম্পান থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নানা কারণে আমরা জেলেরা ভালো নেই।