আবার চিনির দাম বাড়াতে চান ব্যবসায়ীরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ এক মাস আগে প্রতি কেজি চিনির দাম ১২০ টাকা থেকে ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা মানেননি ব্যবসায়ীরা; দাম আরও বাড়াতে এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন তারা।
বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৩৫ টাকা এবং প্যাকেটের চিনি ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার সরকারিভাবে খোলা চিনির দাম ১৪০ টাকা এবং প্যাকেটের চিনির দাম ১৫০ টাকা নির্ধারণের জন্য ট্যারিফ কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ শুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
রোববার (১১ জুন) সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাস্কফোর্সের সভা হয়, পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ব্যবসায়ীরা যে তা মানেননি, সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মূলত ব্যবসায়ীদের পক্ষেই কথা বলেন সচিব।
এ বিষয়ে তপন ঘোষ বলেন, “চিনির প্রধান উৎস ব্রাজিল ও ভারত। তবে এই মুহূর্তে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির ফলে টিসিবির আন্তর্জাতিক টেন্ডারের চিনিও দেশে আনা সম্ভব হয়নি।

“আন্তর্জাতিকভাবে চিনির একটা সংকট যাচ্ছে। চিনির দাম প্রতি টন ৪৫০ ডলার থেকে বেড়ে গিয়ে প্রায় ৭০০ ডলারে ঠেকেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যখন বেশি অস্থিতিশীল থাকে তখন দেশের বাজারে দাম স্থিতিশীল করাটা খুবই টাফ।”
বাণিজ্যসচিব বলেন, “মাসখানেক আগে আমরা যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সেটাও রক্ষা করা যায়নি। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছিল। সে কারণে আমাদের মিলাররাও দাম বাস্তবায়ন করতে পারেন নাই। সবার মধ্যে একটা আশঙ্কা ছিল যে, আন্তর্জাতিক বাজারে দামটা আরও বেড়ে যায় কিনা।”
ব্যবসায়ীদের নতুন প্রস্তাব নিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমরা বিভিন্ন ধরনের প্যারামিটার বিশ্লেষণ করে দেখব যে আসলে পরিস্থিতি কী? আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যদি কমতির দিকে থাকে, আমি আশা করি দাম হয়ত আর বাড়বে না।”
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো ‘সিন্ডিকেট’ কাজ করেছে কিনা জানতে চাওয়া হয় বাণিজ্যসচিবের কাছে; উত্তরে তিনি বলেন, “সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমি জানি না। তবে যখন আমদানি বন্ধ থাকে, তখন হয়ত ব্যবসায়ীরা মনে করতে পারেন যে, ‘চাহিদা বেশি, আমরা দাম বাড়িয়ে দেব।’ ব্যবসায়ীরা সেই সুযোগটা নেওয়ার চেষ্টা করে।”
দাম বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর করা হলেও ‘কমার ঘোষণা’ খুব ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন হয়; বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির খবরেই দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়। আবার দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার পরও দেশের বাজারে দা প্রভাব পড়ে খুব ধীর গতিতে।
ব্যবসায়ীদের এমন প্রবণতা প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিবের ব্যাখ্যা, “আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেই সঙ্গে সঙ্গে দেশে সেই পণ্যের দাম কমানো সম্ভব হয় না, কারণ আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে ডলারের দাম একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, শুল্ক হার, অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয় মূল্য নির্ধারণে প্রতিফলন ঘটে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার দুই মাসেও দেশের বাজারে কেন দাম কমে না এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “সহজভাবে ব্যাখ্যা করলে হবে না। আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার এক্সচেঞ্জ রেট, পণ্যের ওপর শুল্ক বেড়ে যায় কেনা মূল্য বাড়ার কারণে।
“জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই দামটা পরিবর্তন হয়। এজন্য যদি কেউ বলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ২০ শতাংশ কমেছে, দেশের বাজারে কেন ২০ শতাংশ কমল না? তাহলে কিন্তু হবে না। সবকিছু ক্যালকুলেশন করেই বলা যাবে যে দাম আসলে কত টাকায় সমন্বয় করা উচিত।”
‘সংকট কেবল আদার’
ঈদ সামনে রেখে নিত্যপণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা ছিল এদিনের বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়।
বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশের বাজারে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। সয়াবিন তেলের দাম কমানো হয়েছে লিটারে ১০ টাকা, আর পাম তেলের দাম কমানো হয়েছে ২ টাকা করে।
তবে দেশে কেবল আদার সংকট রয়েছে দাবি করে সচিব বলেন, “গত এক বছরে চাহিদা বিবেচনায় দেশে চিনি, গম ও আদা ছাড়া অন্য কোনো পণ্যে সরবরাহে ঘাটতি নেই। ঈদুল আজহায় যেসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে সেগুলোর দাম স্থিতিশীল রাখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য পণ্যের দামও স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে কথা হয়েছে। চীন থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দেশে আদার সংকট আছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে।
“ঈদ সামনে রেখে পেঁয়াজ আদা, রসুন, ভোজ্যতেল বেশি প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে প্রতিকেজি ৬০/৭০ টাকায় নেমে এসেছে। আজকে তেলের দাম কমিয়ে দেওয়া হলো। লবণের উৎপাদন ও সরবরাহ ভালো রয়েছে। চীনে উৎপাদন কম হওয়ায় তারা রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে এখন আদা আমদানি হচ্ছে।”
এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৩০ হাজার টন দেশে এসেছে। অনুমোদন প্রাপ্ত বাকি পেঁয়াজ দেশে এলে দাম আরও কমবে।
দেশে গত এক বছরে ২৪ লাখ টন গম ‘কম’ আমদানি করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, এই সময়ে চিনি আমদানি ৭২ হাজার টন কমেছে।