স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে রিকশাচালককে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত নারী আইনজীবী আরতী রাণী ঘোষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানবববন্ধন হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে যশোর জেলা ভ্যান রিকসা শ্রমিক লীগের উদ্যোগে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া জেলা আইনজীবী সমিতি তাকে শো-কজ করেছে। এদিকে সাইফুল ইসলাম নামে ওই রিকসাচালক গতকাল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শ্রমিক লীগের মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, ‘শিক্ষিত এবং আইনের মানুষ হয়েও বেআইনি কাজে আমরা নিজেরাই লজ্জিত। বিনাদোষে একজন নারী রিকসাচালককে প্রকাশ্যে মারধর ও জুতাপেটা করায় ঐ আইনজীবী ঘৃণিত কাজ করেছেন। নারী আইনজীবীর এই কাজে দেশের সকল আইনজীবীদের জন্য মর্যাদাহানিকর হয়েছে। দ্রুত এই আইনজীবীকে শাস্তির আওতায় না আসলে আমরা শহরে রিকসা না চালানোর হুশিয়ারি দেন বক্তরা।
যশোর জেলা ভ্যান রিকসা শ্রমিক লীগের সভাপতি আবু তাহের মিয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইনছুর আলী, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক কাজী আবদুস সবুর হেলাল, জেলা শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জবেদ আলী প্রমুখ।
গত রোববার দুপুরে যশোর আদালতের সামনে মুজিব সড়কে এক রিকশাচালককে মারধরের অভিযোগ ওঠে আইনজীবী আরতি রানী ঘোষের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার ভিডিও সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। অভিযুক্ত আইনজীবী শহরের অম্বিকা বসু লেনের নীলরতন ঘোষের স্ত্রী। আর ভুক্তভোগী রিকশাচালক সাইফুল ইসলাম (৪০) সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর সিজালি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিকসাচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৬ বছর এই শহরে রিকসা চালায়। ঘটনার দিন যশোর পার্সপোট অফিস থেকে একটি যাত্রী নিয়ে শহরের পালবাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। পতিমধ্যে আদালতের সামনের সড়কে আসলে ওই নারী আইনজীবী হঠাৎ করেই রাস্তা পার হচ্ছিলেন। এমন সময় তার গায়ে লেগে যায় রিকসার চাকা। আমি তাৎক্ষণিক রিকসা থেকে নেমে তার কাছে মাফ চাই। তিনি আমাকে জামার কলার ধরেই গালাগালি দিয়েই এলোপাতাড়ি চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন। বারবার তাকে মাফ চাই তিনি মাফ তো করলেন না; বরং মারতে থাকে।
রিকসাচালক আরো বলেন, ‘এক পর্যায়ে রিকসা নিয়ে আমি পালিয়ে আসি আমার যাত্রীকে নিয়ে। যাত্রীকে তার গন্তব্য পৌঁছে দেওয়ার পর ওই যাত্রী আমার মার খাওয়া দেখে ওষুধ কেনার জন্য এক শ’ টাকা দেন। এরপর শহরের গ্যারেজে রিকসা জমা দিয়ে বাড়িতে এই ঘটনা কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে বিশ্রাম নেই দুই দিন। পরে ভিডিওটি ভাইরাল হলে সবাই জানতে পারে। এর পর স্বজনেরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে, রিকশাচালককে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত নারী আইনজীবী আরতি রানীকে শো-কজ করেছে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতি। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা স্বাক্ষরিত নোটিশ মঙ্গলবার সকালে আইনজীবীর বাড়িতে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু মোর্তজা বলেন, আইনজীবীদের প্রতীক কালো গাউন পরা অবস্থায় রিকশাচালককে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় আইনজীবীদের জন্য মর্যাদাহানিকর। এ বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আরতি রানী ঘোষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ওই নোটিশে আগামী তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব সন্তোষ না হলে আরো কঠোর সিন্ধান্ত নিবে সমিতি। তিনি জানান, ইতোমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রিকসাচালককে আমরা চিকিৎসার খোঁজ খবর নিচ্ছি। তার চিকিৎসার সকল খরচ সমিতি বহন করবে।
মারপিটের বিষয়ে আইনজীবী আরতি রানী ঘোষ তাৎক্ষণিকভাবে দাবি করেছিলেন, তিনি কোর্ট থেকে ফেরার পথে সড়ক অতিক্রম করতে গেলে ওই রিকশাচালক তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন। এ কারণে তিনি তাকে মারধর করেন। উত্তেজিত হয়ে তিনি এ কাজ করেছেন বলে দাবি করেন।
এদিকে, আরতী রাণীর এই মারপিট কান্ড ও ভাইরাল ভিডিও নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতি।