খুনিদের দুই অস্ত্র সরবরাহকারী আটক বেনাপোলে, হত্যা মিশন অভয়নগরে

0

wwwwwwwwwwwস্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এলাকায় গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৬ রাউন্ড গুলিসহ দুই জনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। আটক দুই জনই চরমপন্থি সংগঠন নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। ওই অস্ত্র অভয়নগরের চরমপন্থি সংগঠনের এক ক্যাডারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো। গতকাল বুধবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) বেলাল হোসাইন।
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, অভয়নগরের কয়েকজন রাজনীতিক ও পুলিশের সোর্স সন্দেহে কয়েক ব্যক্তি চরমপন্থিদের টার্গেট রয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র-গুলি তাদের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হতো বলে তথ্য মিলেছে।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে বলা হয়, যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে কথিত চরমপন্থি সংগঠন নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ও পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, শ্রেণি শত্রু খতম এবং চাঁদাবাজি নিয়ে কয়েকটি হত্যার ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ চরমপন্থি সদস্য এবং অস্ত্র-গুলি সরবরাহকারীদের শনাক্তসহ আটকে তৎপর হয়। এক পর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম ও এসআই শফি আহমেদ রিয়েল গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে বেনাপোলের ধান্যখোলা দক্ষিণপাড়ার আইয়ুব আলীর ছেলে মহিদুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালান। এ সময় তার ঘরে তল্লাশি চালিয়ে ১টি রিভলবার, ২টি ওয়ান শ্যুটারগান ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় মহিদুল ইসলামকে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে নিয়ে আসা এই অস্ত্র-গুলির মালিক আতিয়ার রহমানকে আটক করা হয়। আটক আতিয়ার রহমান ধান্যখোলা উত্তরপাড়ার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। আটকের পর ওই দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির নেতা অভয়নগরের আন্দা গ্রামের গণেশ মল্লিকের ছেলে দীপংকর ভারতে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি এই আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি পাঠিয়েছেন। আন্দা গ্রামের আদিত্য নামে এক চরমপন্থি ক্যাডারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো অস্ত্র-গুলি। কিন্তু তার কাছে পৌঁছানোর আগেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বেনাপোলের ধান্যখোলায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র-গুলির চালান আটক করা সম্ভব হয়েছে। অস্ত্র-গুলি আদিত্যের হাতে পৌঁছালে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত হতো বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার, এসআই মফিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, আটক মহিদুল ইসলাম ও আতিয়ার রহমান সম্পর্কে শ্যালক-ভগ্নিপতি। ঈদের আগের দিন ২১ এপ্রিল ভারত থেকে অস্ত্র-গুলি নিয়ে আসেন আতিয়ার রহমান। ঈদের পর দিন ২৩ এপ্রিল তিনি এই অস্ত্র-গুলি শ্যালক মহিদুল ইসলামের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। চরমপন্থি ক্যাডার আদিত্যর কাছে অস্ত্র-গুলি পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো। গত মঙ্গলবার রাতে আদিত্য ওই অস্ত্র-গুলি নেওয়ার জন্য বেনাপোলে কালীপদ নামে এক চরমপন্থিকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই ডিবি পুলিশ ধান্যখোলায় মহিদুল ইসলামের বাড়িতে হানা দিয়ে অস্ত্র-গুলি উদ্ধার করে। সেই সাথে মহিদুল ইসলাম ও তার ভগ্নিপতি চরমপন্থি দলের সদস্য আতিয়ার রহমানকে আটক করা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অভয়নগরের কয়েকজন রাজনীতিক ও পুলিশের সোর্স সন্দেহে কয়েক ব্যক্তি নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির টার্গেটে রয়েছে। এদেরকে হত্যার জন্য আদিত্যর কাছে অস্ত্র-গুলি পাঠানো হচ্ছিলো।
ডিবি পুলিশ জানান, অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের ঘটনায় এসআই মফিজুল ইসলাম আটক দুজন ছাড়াও আরও ৪ জনকে আসামি করে বেনাপোল পোর্ট থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেছেন। অপর আসামিরা হলেন অভয়নগর উপজেলার আন্দা গ্রামের গণেশ মল্লিকের ছেলে দীপংকর, দেবদাস রায়ের ছেলে আদিত্য রায়, নওয়াপাড়ার আকাশ বিশ্বাস ও কালীপদ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল জানান, আটক মহিদুল ইসলাম ও আতিয়ার রহমানকে গতকাল বুধবার আদালতে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে মহিদুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অবন্তিকা রায় তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। তিনি আরও জানান, আটক আতিয়ার রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিলেন। একই আদালত শুনানি শেষে তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।