মনিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাম এক্স-রে ইসিজি ও কেবিন ভাড়ায়

0

মজনুর রহমান,মনিরামপুর (যশোর) ॥ মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি এবং কেবিন ভাড়া বাবদ নির্দিষ্ট ফিসের বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বহির্বিভাগে ফিস বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় সম্পর্কে দৈনিক লোকসমাজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশের পর নিজেদের রক্ষা করতে নতুন করে ব্যাকডেটে ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রার তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এ রেজিস্ট্রারে প্রকৃত তথ্য গোপন করে ( সংখ্যা কম দেখিয়ে) সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সরেজমিন অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
জানা যায়, সরকারি ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে এবং কেবিন ভাড়া বাবদ চিকিৎসার জন্য রোগীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফিস নেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.তন্ময় কুমার বিশ^াস দুই বছর আগে যোগদানের পর থেকে আদায় করা হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সংশোধিত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে ডিজিটাল এক্সরে করতে ছোট সাইজ (প্রতিফিল্ম) ১৫০ টাকা, বড় সাইজ ২০০ টাকা নেওয়ার কথা।
কিন্তু সোমবার বেলা ১১ টায় সরেজমিন দেখা যায়, ছোট সাইজের এক্সরের জন্য নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা, আর বড় সাইজের জন্য নেওয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা। লাউড়ী গ্রাম থেকে আসা দিপংকর কুমার জানান, হাতের আঙুলের একটা এক্সরে করতে তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ২০০ টাকা। আবার পাড়ালা গ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন জানান, তার হাতের এক্সরে করতে নেওয়া হয়েছে ২৫০ টাকা। প্রতি রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা আদায় করা হয়। প্রতিদিন ছোটবড় মিলে ১৮ থেকে ২৫টি এক্সরে করা হয়। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন ১৮ থেকে ২৫টি এক্সরে করা হলেও রেজিস্ট্ররে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১০ থেকে ১২টি। আর এ জন্য সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রার। নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় সম্পর্কে এক্সরে বিভাগের দায়িত্বে থাকা ব্র্যাকের টেকনোলজিস্ট নেহাল উদ্দিন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কার্ডিওগ্রাফার তুহিন আহমেদ জানান, এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।
অন্যদিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত স্বাস্থ্যকর্মী শাহানাজ খাতুন আল্ট্রাসনোগ্রাম করছেন। ইব্রাহিম হোসেন ও আশিকুর রহমান নামে দুই রোগী জানান, তাদের কাছ থেকে আল্ট্রাসনোর জন্য নেওয়া হয়েছে ৩০০ টাকা করে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০টি আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। ১১০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে শাহানাজ খাতুন জানান, বেশি নেওয়া হচ্ছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায়। তবে প্রতিদিন কতটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয় এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দেননি তিনি।
অভিযোগ রয়েছে এখানেও রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ৮ থেকে ১০টি। ইসিজির ফিস নেওয়ার কথা ৮০ টাকা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি ইসিজি করা হয়। প্রতি রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০ টাকা হারে আদায় করা হয়। প্রতিটি কেবিন চার্জ দিনপ্রতি ১০০ টাকা হারে নেওয়ার কথা থাকলেও আদায় করা হয় ২৭৫ টাকা। ১৭৫ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়।
তবে ভুয়া বা ব্যাকডেটে ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রার খাতা তৈরি করার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় বিশ^াস জানান, অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকা দিয়ে চুক্তিভিত্তিক কয়েকজন স্টাফের বেতনভাতা দেওয়াসহ অভ্যন্তরীণ খরচ নির্বাহ করা হয়। উল্লেখ্য বহির্বিভাগে তিন টাকা এবং ভর্তি রোগীর জন্য পাঁচ টাকা নেওয়ার বিধান থাকলে নেওয়া হয় ১০ টাকা এবং ২০ টাকা। এ ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার লোকসমাজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।