সুসংবাদের বার্তাবহ আলবিদা রমজান

0

মহিউদ্দীন মোহাম্মদ ॥ আজ ২৪ রমজান। আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে ঈদুল ফিতর। ঈদ উৎসবে যাতে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে এজন্য ফরজ করে দেওয়া হয়েছে জাকাতুল ফিতরকে। যাকাতুল ফিতর অর্থ- পবিত্রকরণ, দানশীলতা যেটি রোজা ভেঙে ফেলার জন্য দেওয়া হয়। এবং এই দান এমন একটি পরিমাণ যা দরিদ্র মুসলিমদেরকে খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয়। এবিষয়ে আবু দাউদে উদ্ধৃত একটি হাদিস রয়েছে যেখানে বলা হচ্ছে, মুহাম্মদ সা. প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জাকাত ফরজ করেছেন। [পৃষ্ঠা-৩ কলাম ৭]
অপরদিকে ইবন ওমর [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সকল মুসলিমের ওপর রাসূল সা. এক ‘সা’ তামার (খেজুর), অথবা এক ‘সা’ গম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং সালাতের পূর্বে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুখারির অপর বর্ণনায় আছে, নাফে র. বলেছেন, ইবন ওমর ছোট-বড় সবার পক্ষ থেকে তা আদায় করতেন, তিনি আমার সন্তানদের পক্ষ থেকে পর্যন্ত আদায় করতেন। যারা তা গ্রহণ করত, ইবন ওমর তাদেরকে তা প্রদান করতেন, তিনি ঈদুল ফিতরের একদিন অথবা দু দিন আগে তা আদায় করতেন। আবু সায়িদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা জাকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ বার্লি, অথবা এক ‘সা’ গম, অথবা এক ‘সা’ খেজুর, অথবা এক ‘সা’ পনির, অথবা এক ‘সা’ কিসমিস দ্বারা।
ইবন আব্বাস [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রোজাদারকে অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করা ও মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থা স্বরূপ রাসূল [সা.] জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন। সালাতের পূর্বে যে আদায় করল, তা গ্রহণযোগ্য জাকাত, যে তা সালাতের পর আদায় করল, তা সাধারণ সদকা। কায়স ইবন সাদ [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জাকাত ফরয হওয়ার পূর্বে আমাদেরকে রাসূল [সা.] সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন, যখন জাকাত ফরজ হল, তিনি আমাদের নির্দেশ দেননি, নিষেধও করেননি, তবে আমরা তা আদায় করতাম।
শিক্ষা ও মাসায়েল: এক. যাকাতুল ফিতর সকল মুসলিমের ওপর ফরজ, যা ফরজ হয়েছে জাকাতের পূর্বে। জাকাত ফরজের পর পূর্বের নির্দেশের কারণে তা এখনো ফর। দুই. প্রত্যেক মুসলিমের নিজ ও নিজের অধীনদের পক্ষ থেকে, যেমন স্ত্রী-সন্তান ও যাদের ভরণ- পোষণ তার ওপর ন্যস্ত, জাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। তিন. স্ত্রী-সন্তান যদি কর্মজীবী অথবা সম্পদশালী হয়, তাহলে তাদের প্রত্যেকের নিজের পক্ষ থেকে যাকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম, কারণ তারা প্রত্যেকে জাকাতুল ফিতর প্রদানে আদিষ্ট। হ্যাঁ, যদি তাদের অভিভাবক তাদের পক্ষ থেকে আদায় করে, তাহলে জায়েজ আছে, যদিও তারা সম্পদশালী। চার. জাকাতুল ফিতরের মূল্য দেওয়া যথেষ্ট নয়, এটা জমহুর আলেমের অভিমত। কারণ নবী সা. নির্দেশ দেননি, তিনি এরূপ করেননি, তার কোনও সাহাবি এরূপ করেননি, অথচ প্রতি বছর জাকাতুল ফিতর আসত। অধিকন্তু ফকিরকে খাদ্য দিলে সে নিজে ও তার পরিবার তার দ্বারা উপকৃত হয়, অর্থ প্রদানের বিপরীত, কারণ সে অর্থ জমা করে পরিবারকে বঞ্চিত করতে পারে। দ্বিতীয়ত মূল্য আদায়ের ফলে শরিয়তের এ বিধান তেমন আড়ম্বরতা পায় না। পাঁচ. জাকাতুল ফিতর আদায়ের প্রথম সময় আটাশে রমজান, সাহাবায়ে কেরাম ঈদের একদিন অথবা দু দিন পূর্বে তা আদায় করতেন, সর্বশেষ সময় ঈদের সালাত, যেমন হাদিসে এসেছে। ছয়. হকদার ফকির-মিসকিনদের এ যাকাত দিতে হবে, কারণ নবী সা. বলেছেন,মিসকিনদের খাদ্য স্বরূপ। প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের দেওয়া ভুল যদি তারা অভাবি না হয়, যেমন কতক লোক কুরবানি ও আকিকার গোশতের ন্যায় জাকাতুল ফিতর পরস্পর আদান প্রদান করে, এটা সুন্নতের বিপরীত। কারণ এটা জাকাত, হকদারকে দেওয়া ওয়াজিব, কুরবানি ও আকিকার গোশতের অনুরূপ নয়, যা হাদিয়া হিসেবে দেওয়া বৈধ। আরেকটি ভুল যে, কতক মুসলিম প্রতি বছর নির্দিষ্ট পরিবারকে জাকাতুল ফিতর আদায় করে, অথচ বর্তমান সে সচ্ছল হতে পারে, কিন্তু পূর্বের ন্যায় জাকাত দিতে থাকে, এটা ঠিক নয়। সাত. নিজ দেশের অভাবিদের জাকাতুল ফিতর দেওয়া উত্তম, তবে অন্য দেশে দেওয়া জায়েয, বিশেষ করে যদি সেখানে অভাবের সংখ্যা বেশি থাকে, তাদের চেয়ে বেশি অভাবি নিজ দেশের কারও সম্পর্কে জানা না থাকে, অথবা তার দেশের অভাবিদের দেওয়ার অন্য লোক থাকে।