চৌগাছায় গমের বাম্পার ফলন : খুশি কৃষক

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় দিন দিন গম চাষের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। এক সময় বিক্রি ও দাম কম এবং ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের মুখে পড়ে চাষিরা গম চাষ বন্ধ করে দিয়েছিল। বর্তমানে গমের বাজার মূল্য ভালো থাকায় আবারো চাষিরা আবাদ শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষকরা অর্থকরী ফসল হিসেবে গম চাষ করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে নগদ অর্থ পাওয়া যেত। কিন্তু ২০১৬ সালে ব্লাস্টের আক্রমণে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়। বর্তমানে ভালো ফলন ও বাজারমূল্য থাকায় লাভবান হচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা। তবে হুইট ব্লাস্ট ভাইরাস একেবারে নির্মূল না হলেও চলতি মৌসুমে তার প্রভাব পড়েনি গম ক্ষেতে।
তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগের কথা না শুনে যারা গম চাষ করেছিলেন তারা বারবার লোকসানের মুখে পড়েন। একসময় তারাও এ চাষ থেকে সরে যান। ২০১৯-২০ মৌসুমে পরীক্ষামূলক ভাবে বেশ কয়েকটি জাতের গমের আবাদ করে কিছুটা লোকসান কম হয় কৃষকদের। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ মৌসুমেও লাভের মুখ দেখতে থাকেন উপজেলার গম চাষিরা। গত মৌসুমে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সেই জাতগুলোর গম চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে নানামুখী প্রচারণা চালানো হয়। ফলে চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষকরা ব্লাস্টমুক্ত গম ঘরে তুলছেন। গম চাষে আবারো সুদিন ফিরছে এ উপজেলার চাষিদের।
জানা যায়, ২০১৯-২০ মৌসুমে একেবারে শূন্য থেকে ৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছিল। ২০২০-২১ মৌসুমে ১৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়। সে মৌসুমেও খুব ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি কৃষকরা। হুইট ব্লাস্টের দাপট কমলেও অধিকাংশ জমিতেই দেখা যায় এর প্রভাব। ২০২১-২২ মৌসুমে গম চাষে লাভের মুখ দেখেন কৃষকরা। ওই মৌসুমে ব্লাস্টের প্রভাব থাকলেও খুব একটা প্রভাব পড়েনি গম খেতে। কিছুটা লাভের মুখ দেখা দেওয়ায় ২০২২-২৩ মৌসুমে উপজেলায় ২২৩ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যত্রার চেয়ে প্রায় ৫০ হেক্টর বেশি। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে অধিকাংশ কৃষকই কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাত বারি-৩০ ও ৩৩ গম চাষ করেন। ফলে একদিকে যেমন বেড়েছে গমের চাষ অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর গম চাষে আতঙ্ক ছাড়াই অধিক ফলন হওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।
উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি জাকির হোসেন বলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে গম চাষ করে ৫৫ মণ গম পেয়েছেন। রোগ বালাই কম থাকার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। তিনি এ বছর প্রায় ৯০ হাজার টাকায় গম বিক্রি করেছেন। বাজার দরেও তিনি খুশি। একই গ্রামের গম চাষি নুরুজ্জামান, হোসেন আলী, অমেদ আলী, হবিবর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর খুবই ভালো ফলন হয়েছে। আগের বছরগুলোয় গমে অনেক রোগ ছিল। কিন্তু এ বছর কোনো রোগ নেই। এলাকার সবার গম ভালো হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসাইন বলেন, উপজেলায় ২০১৭-১৮ সালের দিকে গমের আবাদ অনেকটাই শূন্যের কোটায় চলে যায়। সে পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। আমাদের কৃষকরা আবারো গম চাষে এগিয়ে এসেছেন। ব্লাস্ট একেবারে নেই বললে চলে। উপজেলার আবহাওয়া গম চাষের জন্য উপযোগী। আগামীতে গম চাষ আরও বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।