চৌগাছায় আজ থেকে শুরু দুই দিনের গুড় মেলা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ ’যশোরের যশ খেজুরের রস’ সেই রস, গুড় তথা খেজুর গাছ রক্ষায় চৌগাছাতে আজ সোমবার থেকে দুই দিনের গুড় মেলা শুরু হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের ব্যতিক্রম এ আয়োজন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এ অঞ্চলে। গাছিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। মেলা উপলক্ষে উপজেলা চত্তরকে সাজানো হয়েছে রঙিন সাজে। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মেলাতে সব ধরনের মানুষের সরব উপস্থিতি ঘটবে বলে মনে করছেন মেলা আয়োজক কমিটি।
আয়োজকরা বলছেন, যশোরের খেজুর গাছ, রস ও গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও স্থানীয়দের উদ্বুদ্ধ করতে এ আয়োজন করা হয়েছে। চলতি শীত মৌসুমের শুরু থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রস্তুতি হিসেবে খেজুর গাছ তোলা শেষ হলে উপজেলা প্রশাসন চৌগাছাতে গাছি সমাবেশ করেন। সেখানে সুন্দরভাবে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এবং কে কতটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করবেন তার তালিকা করে সর্বাধিক গাছ তোলা গাছিকে পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। মনের আনন্দে উপজেলা অন্তত সাড়ে চারশ’ গাছি খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করেন। শীতের মাঝা মাঝিতে এসে উপজেলা প্রশাসন নতুন আর একটি উদ্যোগ গ্রহন করেন, সেটি হচ্ছে গুড়ের মেলা। উপজেলার সকল গাছিকে এই মেলাতে তাদের হাতে তৈরি গুড় নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। প্রায় সপ্তাহব্যাপী গোটা উপজেলাতে চলেছে মাইকে প্রচার।
রবিবার দুপুরে মেলা চত্তর উপজেলা পরিষদে যেয়ে দেখা যায়, সাজ সাজ রব। উপজেলা চত্তরের পাশে ঈদগাহ এবং বৈশাখী মঞ্চের সামনে তৈরি করা হয়েছে প্যান্ডেল। গাছিরা তাদের গুড় নিয়ে এই স্থানে হাজির হয়ে স্টল দেবেন। নির্মান করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন একটি তোরণ। গাছি এমনকি সাধারণ উৎসুক মানুষ মেলার একদিন আগেই মেলা চত্তর দেখতে এসেছেন।
উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের মেলা, তাই খবর পেয়ে একদিন আগেই মেলার পরিবেশ কেমন তাই দেখতে এসেছি। পাঁচনামনা গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, বলুহ মেলা, বই মেলা, ডিজিটাল মেলা, উন্নয়ন মেলা কতো না মেলার নাম শুনেছি, কিন্তু গুড় মেলার নাম এই প্রথম শুনছি, তাই মেলা চত্তর ঘুরতে এলাম খুবই ভালো লাগছে। এই উদ্যোগ খেঁজুর গাছ রক্ষায় সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলে তিনি মনে করছেন।
উপজেলার বাঘারদাড়ি গ্রামের গাছি লিয়াকত আলী বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে খেঁজুর কাটি, প্রতি বছর ১০০ থেকে ১২০টির বেশি খেঁজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করি। জীবনে এই প্রথম একটি ভালো কাজ দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে। মেলাতে গুড়, পাটালি নিয়ে আসবো, তাই একদিন আগে জায়গা দেখতে এসেছি, পরিবেশ দেখে খুবই আনন্দ লাগছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরুফা সুলতানা বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে সোমবার সকাল ৯ টায় কাঙ্খিত মেলার উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, খেজুরের গুড়ের জন্যই যশোর জেলা বিখ্যাত। কিন্তু নানা কারনে খেজুর গাছ আজ বিলুপ্তির পথে, খেজুর গাছ রক্ষায় সঠিক ব্যবস্থা না করলে ভবিষ্যতে জেলার ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে সেই ভাবনা থেকেই এই মেলার আয়োজন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, অধ্যক্ষ ড.এম মোস্তানিছুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে গুড় মেলাতে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ঘটবে বলে আশা করছি। খেজুর গাছ রক্ষা করা আমাদের জন্য জরুরি, মেলার মাধ্যমেই মানুষের মাঝে সেই বার্তা আমরা পৌঁছে দিতে চাই।