খুলনায় হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত সহোদর দুই শিক্ষক বরখাস্ত

0

জামাল হোসেন, খুলনা॥ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়েও বহাল তবিয়তে সরকারি চাকরিতে কর্মরত ছিলেন খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সহোদর দুই শিক্ষক।মামলা এবং কারাবাসের বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে সবকিছুই ম্যানেজ করে নিয়েছিলেন তারা। কিন্তু সম্প্রতি ফাঁস হয় প্রায় ধামাচাপা পড়ে যাওয়া চাঞ্চল্যকর এই তথ্য। যার যের ধরে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে সেই শিক্ষক সহোদর ফারুক শেখ ওরফে মোহাম্মদ ফারুক ইসলাম এবং তার ভাই মো. আবুল কালাম শেখকে।
মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি কারাবরণের দিন থেকেই তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তারা এ সময়কালে অর্ধেক বেতন প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে কারাবরণের দিন অর্থাৎ ৫ বছর আগে থেকেই উত্তোলনকৃত বেতনের অর্ধেক ফেরত দিতে হবে। এছাড়া বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আলোচিত শিক্ষক সহোদর ফারুক শেখ ওরফে মো. ফারুক ইসলাম ও আবুল কালামের বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের পদ্মবিলা গ্রামে। তারা ওই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক শেখের ছেলে। এর মধ্যে ফারুক ইসলাম সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন উপজেলার ১৫ নম্বর হাজীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর তার ভাই আবুল কালাম কর্মরত ছিলেন একই উপজেলার ২২ নং কামারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। তারা দুজনই একই হত্যা মামলার এজাহার ও চার্জশিটভুক্ত আসামি।
গত চার জানুয়ারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আলাদা দুটি অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, খুলনা জেলাধীন দিঘলিয়া উপজেলার ১৫ নং হাজীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ফারুক ইসলাম ও ২২ নং কামারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম শেখের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে দিঘলিযা থানার মামলা নং-০৭, তারিখ: ২৩.০৮.২০১২ দায়ের হয। মামলায পুলিশ কর্তৃক ২৭ ফেব্রয়ারি ২০১৮ তারিখ তারা গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করায় বিএসআর পার্ট-১ এর বিধি ৭৩ এর নোট-(২) অনুযাযী তাদেরকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখ থেকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তবে সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তারা বিধি মোতাবেক খোরাকী ভাতা প্রাপ্ত হবেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১২ সালের ২০ আগস্ট দিঘলিয়া উপজেলার পদ্মবিলা গ্রামের ওলিয়ার মুন্সিকে (৩০) পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার তিনদিন পর ২৩ আগস্ট নিহতের মেয়ে দোলেনা বেগম বাদি হয়ে ২৩জনের নাম উল্লেখ করে দিঘলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৭।
ওই মামলায় হাজীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারুক শেখ ওরফে মো. ফারুক ইসলামকে ১৩ এবং তার ভাই আবুল কালামকে ১৪ নম্বর আসামি করা হয়। পরবর্তীতে দিঘলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আলী নওয়াজ, জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পরিদর্শক মো. মামুনুর রশিদ, সিআইডি পরিদর্শক প্রবীর কুমার বিশ্বাস এবং সর্বশেষ খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলাটি বর্তমানে খুলনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে আলোচিত এ হত্যা মামলার সব অভিযোগপত্রেই শিক্ষক ফারুক ও তার ভাই কালামের নাম থাকলেও না জানার ভান করে রহস্যজনক কারণে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শিক্ষক ফারুক ইসলাম ও আবুল কালাম উল্লেখিত মামলায় ২০১৮ সালে ৩৮ দিন খুলনা জেলা কারাগারে ছিলেন। পরবর্তীতে কারাগার থেকে বের হয়ে ফের তারা বহাল তবিয়তে শিক্ষকতা করে আসছিলেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে দিঘলিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম বলেন, শিক্ষক ফারুক ইসলাম ও আবুল কালামের বরখাস্তের চিঠি সোমবার পেয়েছি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নির্দেশনায় ওইদিন থেকেই আদেশ কার্যকর করেছেন।
খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি জানার পর শিক্ষক ফারুক ইসলাম ও আবুল কালামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যা মামলার কপি এবং কারাগারে থাকার প্রমানপত্র চেয়ে দিঘলিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পাওয়ার পরই তাদের সামরিক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। আর হত্যা মামলায় তারা দুই বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত হলে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে।