শুধু মন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশে কাজ হবে না

0

 

গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কের পরিধি, গ্রাহকসংখ্যা, আয়-সবই যেমন শীর্ষে তেমনি সেবা অবনমনের মানও শীর্ষে। মানসম্পন্ন সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে সম্প্রতি তার নতুন সিম বিক্রী বন্ধ করার পর পুরানো সিম বিক্রীও এখন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হয়তো অন্যান্য অপারেটরের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশ্ন হলো, তাতে কি সেবার মান বাড়বে? সেবার মান বাড়াতে এর চেয়েও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। প্রতিটি মোবাইলফোন অপারেটর মানসম্পন্ন সেবা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এক্ষেত্রে কোনোরূপ ব্যত্যয় ঘটলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে। গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক তাদের বিপুল অংকের লভ্যাংশ প্রতি বছর নিয়ে যায়। এ অর্থ এদেশের ধনী-দরিদ্র সকল গ্রাহকের দেয়া অর্থ। সঙ্গতকারণেই তারা মানসম্পন্ন সেবা আশা করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, ভয়েস কলসেবার মতো ইন্টারনেট সেবাও অবনত মানের। সব মোবাইলফোন অপারেটরের ফোরজি সেবা দেয়ার কথা থাকলেও কোনো ফোনেই নির্ধারিত ন্যূনতম ডাউনলোড গতি পাওয়া যায় না। অভিযোগ রয়েছে, দেশের অধিকাংশ এলাকায় ফোরজি সেবার তো প্রশ্নই ওঠে না, টুজি সেবাও পাওয়া যায় না।
এটা প্রমাণিত সত্য যে, মোবাইলফোন অপারেটরদের গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর দিকেই নজর। কমছে শুধু সেবা। মানোন্নয়নে তেমন আগ্রহ নেই কারো। পরিসংখ্যান বলছে, তাদের গ্রাহকসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সেই সুবাদে আয়ও বাড়ছে। আসলে আয় বাড়ানোই মূল উদ্দেশ্য। এজন্যই গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর এত গরজ। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে নানা রকম অফার দিচ্ছে এবং তারা তাতে আকৃষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তারা ঠকছে কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে। ভয়েস কল কিংবা ইন্টারনেট-কোনোটিতেই মানসম্পন্ন সেবা মিলছে না। জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে গ্রামীণফোন আয় করেছে ১১ হাজার ২৮৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। রবি ও বাংলালিংকের আয়ও আগের চেয়ে বেড়েছে। অথচ, কোনো অপারেটরেরই সেবার মান বাড়েনি বা বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাজে নেটওয়ার্কের কারণে মিউট কল বা কলড্রপ অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একই কলের জন্য একাধিকবার টাকা পরিশোধ করে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র কলড্রপের কারণে বছরে গ্রাহকদের ক্ষতি হচ্ছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। টাকার বিনিময়ে সেবা কিনে গ্রাহকরা প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছে। সেবার এই যাচ্ছেতাই অবস্থায় স্বয়ং ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং সেবার মান বাড়ানোর তাকিদ দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব রীতিমত সাক্ষ্য দিয়েছেন এই বলে যে, তিন মিনিট কথা বলতে গিয়ে তিনি দুইবার কলড্রপের শিকার হয়েছেন।আমরা মনে করি, গ্রাহকসেবার এই দুর্দশার দায় মন্ত্রী ও সচিব ক্ষোভ প্রকাশে এড়িয়ে যেতে পারেন না। পারেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও। মোবাইলফোন গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবার দাবি নতুন নয়। শুরু থেকেই সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আজও তার অবসান ঘটেনি। মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের তরফে বিভিন্ন সময় মিউট বা কলড্রপ বন্ধ এবং ইন্টারনেটের গতি যথাযথ পর্যায়ে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। অথচ, বাস্তবে উভয় ক্ষেত্রে গ্রাহকদের হয়রানি ও ক্ষতি বেড়েছে। সেবার অবনমন ঘটেছে। অপরদিকে, দেশের সব মোবাইলফোন অপারেটরদের গ্রাহকসংখ্যা বিস্ময়করভাবে বেড়েছে। এর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই।