শিক্ষানীতি ও কাঠামো ঠিক করতে হবে

0

 

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট এবং ব্র্যাকের উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণার ফল গত মঙ্গলবার ঢাকা ও প্যারিস থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে মোট খরচের ৭১ শতাংশ বহন করে শিক্ষার্থীদের পরিবার। খরচের এই বিশাল অংশ রীতিমতো আৎকে ওঠার বিষয়। আমাদের স্বাভাবিক প্রশ্ন, সরকার বাংলাদেশ যখন সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাইছে তখন একটি পরিবারকে শিক্ষার পেছনে এত ব্যয় করতে হবে কেন? এই কারণ অনুসন্ধান দেখা যায়, বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেড়েছে পরিবারপিছু শিক্ষা ব্যয়। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক স্তরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আধিক্য পরিবারগুলোর শিক্ষা ব্যয়ের বোঝা বাড়িয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে। সরকারের কোনো তদারকি না থাকায় শিক্ষা খাতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতের পথে প্রধান অন্তরায় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। ইউনেসকোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ৫৫ শতাংশ শিশু প্রাক-প্রাথমিক স্তরে বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। কারিগরি ও ভোকেশনাল পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিক্য সর্বোচ্চ। ছয় হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে মাত্র ৯০০টি। দেশে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে অধ্যয়নরত ২০ শতাংশ শিশুর গৃহশিক্ষক রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে গৃহশিক্ষক বাবদ খরচ ২০০০ সালে ২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১০ সালে ৫৪ শতাংশ হয়েছে। শহরাঞ্চলে এই খরচ ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছরের পত্রিকার সংবাদে দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার মান নিচের দিকে নেমেছে। ২০২০ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল নলেজ ইনডেক্সের (জিকেআই) সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে সবার পেছনে ছিল বাংলাদেশ। এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শেষে। অথচ জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজ থেকে অনার্স এবং এমএ ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধ।
আমাদের দেশে জ্ঞানচর্চা এই পর্যায়ে নেমে এসেছে, কারণ শিক্ষা ব্যবস্থাপনা তার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না। শিক্ষাক্ষেত্রে যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে সহজে কিছু করা যাবে যাবে বলে মনে হয় না। এখন অভিষ্ট অর্জনের জন্য যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের সংঘবদ্ধ দূরদর্শী ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কোন বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার দরকার। অপব্যবস্থার জায়গায় সুব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। এর জন্য প্রথম পর্যায়ে দরকার সর্বজনীন কল্যাণে যুক্তি অবলম্বন করে দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনা, আলোচনা-সমালোচনা ও বিচার-বিবেচনা। শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো যদি ঠিক হয়, তাহলে সেই লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে চেষ্টা চালালে সব সমস্যারই সমাধান করা যাবে। অন্যথায় যত চেষ্টাই করা হোক অবস্থার উন্নতি হবে না। এই বাস্তবতায় সবার আগে শিক্ষানীতি ও কাঠামো ঠিক করতে হবে।