ধর্ষকরা কি সত্যিই অপ্রতিরোধ্য ?

0

 

আমাদের সমাজের পরিচয় যেন পাল্টে যাচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, ধর্ষণকারীরা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করেও কোন লাভ হচ্ছে না। সমাজ যেন ক্রমেই বর্বরতার চরমে চলে যাচ্ছে। ঘটছে মর্মান্তিক ঘটনা। দুদিন আগে সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় এক নারী নৃত্যশিল্পীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। খবরে বলা হয়েছে, ওই নৃত্যশিল্পী তাঁর পুরুষ সঙ্গীসহ এক জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন শেষে রাত ১টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে সাতজনের একটি সংঘবদ্ধ দল তাদের ধরে পুরুষ নৃত্যশিল্পীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এরপর তারা নৃত্যশিল্পীকে উঠিয়ে নিয়ে পাশের নির্জন স্থানে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নৃত্যশিল্পী সাতজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করার পর ঘটনায় জড়িত চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। এদিকে ঢাকার শুক্রাবাদে বাসায় রূপর্চচা কথা বলে এক অন্তঃসত্ত্বা পার্লারকর্মীকে সাভার থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বছর কয়েক আগে এমন অহরহ ঘটনার প্রতিবাদ-আন্দোলনের মুখে এই সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে। কিন্তু তাতে ধর্ষণ বন্ধ হয়নি। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলছে, কঠোর আইন থাকলেও মামলা করা থেকে শুরু করে তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ, বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি কারণে মামলাগুলো বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। অভিযোগ দায়ের দেরি হওয়া, সঠিকভাবে সঠিক সময়ে আলামত সংরক্ষণ না করা, অর্থাৎ পরীক্ষার আগেই ধর্ষণের শিকার নারীর দেহ, পোশাকসহ আলামত ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলা, ফরেনসিক পরীক্ষায় দুর্বলতা, অভিযোগের সপক্ষে জোরালো সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাব বা ভয়ে-চাপে সাক্ষী অনুপস্থিত থাকা, মামলার তদন্তে পুলিশের অবহলো, অদক্ষতা, দুর্বলতা বা সঠিক তদন্ত না হওয়ায় রেহাই পেয়ে যান ধর্ষণে অভিযুক্তরা। বিচার পান না ধর্ষণের শিকার নারীরা। অভিযোগ আছে, তদন্তে দীর্ঘ সূত্রতার কারণে আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমা ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয় না। ফলে দ্রুতবিচার আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনে বিচার সম্পন্ন করা যায় না। অবশ্য ২০২০ সালে দ্রুততম সময়ে ফৌজদারি মামলার রায় ঘোষণার একটি অনন্য নজির স্থাপতি হয়েছিল। মাত্র সাত কর্মদিবসে শিশু ধর্ষণ মামলার রায় দিয়েছিলেন বাগেরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আন্তরিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে পয বিচার কাজ শেষ হতে পারে, এটি ছিল তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যদিও দৃষ্টান্ত ওখানেই থেমে আছে।
আমরা মনে করি, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এবং শাস্তি কার্যকরের কোনো বিকল্প নেই। শাস্তি কার্যকরে বিচার পরবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।