নিরাপদে চলে যান, না হলে পালাবার পথ পাবেন না: মির্জা ফখরুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আপনি বলেছেন দুর্ভিক্ষ আসছে, তাহলে আপনারা আছেন কী জন্য। নিরাপদে চলে যান, না হলে পালাবার পথ পাবেন না।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ডিসি-এসপিদের মিটিং হয়েছে। ডিসি-এসপিরা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কথা শোনেন না। তারা শেখ হাসিনার কথা শোনেন। তাই নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়।’
বুধবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে দরকার ছিল বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার ছিল, কেননা সরকারের নির্দেশেই গুম-খুন হচ্ছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে যে এখানে গুম-খুন হয়। এখানে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে যারা মারা গেছেন তারা সবাই সাধারণ মানুষ। কিন্তু তারা পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়েছে শুধু দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে।’
‘আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে এনে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ৫০ বছর হয়েছে স্বাধীনতার। তখন আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি। এখন আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ করছি,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এ যুদ্ধে যদি আমরা জয়লাভ করতে না পারি, তাহলে দেশ আর দেশ থাকবে না। এই সরকার অনির্বাচিত সরকার। তাদের কোনো ম্যান্ডেট নেই। ২০১৪ সালে তারা একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে, ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে নির্বাচন করেছে, বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ শাসনে পরিণত করেছে।’
‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ১০ টাকায় চাল পাওয়া যাবে। আজকে চালের দাম ৭০ টাকা। সবকিছুর দাম ঊর্ধ্বমুখী। এখন আবার বলছেন বিদ্যুতের দাম বাড়াবেন। এর আগে তারা তেল-গ্যাস-পানির দাম বাড়িয়েছেন। বাড়ানোর একটাই কারণ, শুধু লুট করা ও টাকা পাচার করা। কানাডা ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানাতে তারা এসব লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছেন,’ যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চট্টগ্রামে টানেল বানাচ্ছেন ভালো কথা। কিন্তু লোকজন এখনো খেতে পারে না। দারিদ্র্যসীমার নিচে এখনো অনেক লোক বসবাস করছে।’
সমাবেশে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকের সমাবেশে আসার সময় আওয়ামী লীগ হামলা করেছে, গাড়ি ভেঙেছে। কিন্তু তারপরও তারা লোক সমাগম ঠেকাতে পারেনি। ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী ৬ বছর ধরে জেলে আছেন, এটা কোনো আইনে পড়ে না। তারা বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, দলীয়করণ করেছে। এমনকি পুলিশ-র‌্যাব ও মিডিয়াকেও দলীয়করণ করা হয়েছে।’
‘নির্দলীয় নির্বাচন কমিশন গঠন করেই নির্বাচন দিতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে তেল-ডাল-বিদ্যুতের দাম কমানো হবে। যোগ্যতা অনুযায়ী বেকারদের কর্মসংস্থান করা হবে’, যোগ করেন তিনি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানসহ বিএনপির সব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা আপনি পদত্যাগ করুন। এই আন্দোলন আমরা সবখানে ছড়িয়ে দেবো। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হটাবো। আজকের সমাবেশে লাখো মানুষ বলেছে ফয়সালা হবে রাজপথে।’
জ্বালানি তেল ও নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে গতকাল বুধবার সমাবেশ করে বিএনপি।