ঝিনাইদহে প্রাইমারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ॥ প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারি ও বিদেশি দাতা সংস্থার টাকা নয় ছয় হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দকৃত এই টাকার ভাগ শিক্ষায় কর্মরত ছাড়াও প্রকৌশলী, প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির পকেটে উঠছে বলে তথ্য মিলেছে। ঝিনাইদহ জেলায় প্রাইমারি এডুকেশন ডেভালপমেন্ট প্রজেক্টের (পিইডিপি-৪) চার কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশির ভাগ কাজ না করে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, গত অর্থ বছরে জেলার ৬ উপজেলায় এই প্রজেক্টের আওতায় বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে এক কোটি, হরিণাকুন্ডু উপজেলার ২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ৫৪ লাখ, শৈলকুপার ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ৯০ লাখ, কালীগঞ্জে ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে এক কোটি ৩৪ লাখ, কোটচাঁদপুরে ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ২৪ লাখ ও মহেশপুর ৩৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকূলে ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। শৈলকুপা উপজেলার নাকোইল নব জাতীয়করণকৃত প্রাইমারি স্কুলে এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের দুই লাখ টাকার বরাদ্দ আসে। এই টাকা দিয়ে স্কুলে রং, লেখা ও গ্রিলের কাজ করানো হলেও মোট কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন তা বলতে পারেন নি প্রধান শিক্ষক সুলতানা সোহেলী সিদ্দিকা। তিনি বলেছেন, সভাপতি শরিফুল ইসলাম তার আপন চাচা, তিনিই টাকার মোট তথ্য বলতে পারবেন। ওই স্কুলে স্লিপ প্রকল্পের ৫০ হাজার ও শিশুদের মানসিক বিকাশ সাধনে খেলার সামগ্রী কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়। তবে স্কুলে কোন খেলার সামগ্রী পাওয়া যায়নি। স্লিপ প্রকল্পের টাকায় কী করা হয়েছে তাও বলতে পারেন নি প্রধান শিক্ষক সুলতানা সোহেলী। একই অবস্থা শৈলকুপার দুধসর প্রাইমারি স্কুলে। স্কুলে প্রবেশ পথে ঘাস জঙ্গলে ভরপুর। প্রধান শিক্ষক সাইফুজ্জামান জানান, তারা দুই লাখ টাকা পেলেও ৩০ হাজার টাকা ভ্যাট বাবদ কেটে নেয়া হয়। বাকি টাকা দিয়ে সীমানা প্রাচির, ভবন রং ও পুরনো ভবনের প্লাস্টার করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, স্লিপসহ আরো দুই খাতে তিনি ৬০ হাজার টাকার বরাদ্দ পান। প্রাইমারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের টাকা বরাদ্দ হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে প্রাক্কালন তৈরি করবেন। সে মোতাবেক প্রধান শিক্ষক কাজ করে বিল ভাউচার প্রদর্শন করে উপজেলা প্রকৌশলীর সনদ নিয়ে বিল উত্তোলন করবেন। কিন্তু শৈলকুপা উপজেলায় ৪৫টি স্কুলে এই প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ করা হলেও উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ১৫টি প্রত্যায়ন প্রদান করা হয়েছে বলে উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান। তিনি বলেন, কাজ দেখে আমরা ১৫টির প্রত্যায়নপত্র দিয়েছি। বাকি ৩০টি স্কুলের বিল প্রত্যায়ন জালিয়াতি করে উত্তোলন করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও একই কায়দায় বিল তুলে নেয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের এক প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভ্যাট কেটে তিনি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকার কাজ করেছেন। এক লাখ টাকা স্কুলের জমি কেনার জন্যে সভাপতির কাছে গচ্ছিত আছে। তিনি বলেন, বিল নিতে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসে ৫ হাজার টাকা ও প্রত্যয়ন নিতে সদর উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে ৫ হাজার টাকার ঘুষ দিতে হয়েছে। এই টাকা না দিলে বিল পাওয়া যায় না।
জেলার কালীগঞ্জ ও মহেশপুর উপজেলার স্কুলগুলোতে এই প্রজেক্টের টাকা সবচে বেশি লুটপাট হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতাদের পকেটেও এই টাকার ভাগ উঠেছে বলে সাধারণ শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। জবাবদিহিতা না থাকায় বছরের পর বছর ধরে সরকারি ও বিদেশি দাতা সংস্থার টাকা লুটপাট করা হলেও কারো কোন শাস্তি হচ্ছে না বলে অভিযোগ। শৈলকুপা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইসরাইল হোসেন জানান, এখন প্রায় সব স্কুলে দলীয় কায়দায় সভাপতি। তারা আমাদের স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেন না। যেটুকু কাজ হয়েছে সেটা আমরা তদারকি করে আদায় করেছি। তিনি বলেন, শতভাগ কাজ আদায় করতে গেলে অফিসারদের নাজেহাল বা হয়রানি হতে হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরকারি ও বিদেশি দাতা সংস্থার টাকা নয় ছয় করার কোন সুযোগ নেই। সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমি কঠোর ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের স্বাক্ষর জাল করে প্রত্যয়ন নেয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন।