এএসপি আনিসুলের মৃত্যু : ডা. মামুনের ফোন রোগী পাঠালাম

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম শিপন হত্যার অভিযোগে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আদালতে পুলিশ মামুনের ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে দুই দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। গতকাল দুপুরে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. হারুন অর রশীদ উপকমিশনার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গতকাল সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের নিজ বাসা থেকে রেজিস্ট্রার আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় এজাহারভুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আনিসুল করিম হত্যায় রিমান্ডে থাকা চারজন আসামি ইতিমধ্যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, কারা ইন্ধন দিয়েছে এবং কাদের যোগসাজশে আনিসুল হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, কারা সরকারি মানসিক হাসপাতাল থেকে মাইন্ড হাসপাতালে এএসপি আনিসুলকে নিয়ে গেছে সবকিছু উঠে এসেছে ওই চারজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে। গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল্লাহ আল মামুনের অধীনে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সিনিয়র এএসপি আনিসুল চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন।
এ সময় তিনি আনিসুলকে একটি বেডে শুইয়ে ইনজেকশন পুশ করেন। আনিসুল তখন ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তিনি মাইন্ড এইড হাসপাতালে ফোন করেন। এখানে তার চিকিৎসা হবে না ওই মর্মে আবদুল্লাহ আল মামুন তাকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা এবং ভর্তি না করে ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের ম্যানেজারকে ফোন করে জানায় ‘রোগী পাঠালাম’।
ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, মাইন্ড এইড হাসপাতালে যাওয়ার পর আনিসুল ওয়াশরুমে যেতে চাইলে হাসপাতালে থাকা ১০ থেকে ১২ জন ব্যক্তি মিলে তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে তিনি মারা যান। আবদুল্লাহ আল মামুন সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক। তার কাজ শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা। ভূঁইফোড় হাসপাতালে রোগী দেখা নয়। মামুন সরকারি হাসপাতালের বাইরেও আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতাল, মাইন্ড রয়েল এবং টাঙ্গাইলের ঢাকা ক্লিনিকে রোগী দেখেন (প্র্যাকটিস করতেন)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবদুল্লাহ আল মামুন পুলিশকে জানান, অন্য চিকিৎসকদের দেখাদেখি তিনিও দালালের মাধ্যমে অন্য হাসপাতালে রোগী পাঠাতেন। আনিসুলের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর ডা. মামুন ছুটে যান ওই হাসপাতালে। নিজের দায় এড়ানোর জন্য মৃত্যুর সংবাদ জেনেও আনিসুলকে এম্বুলেন্সযোগে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠান। মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে অবস্থাসম্পন্ন রোগী এলে মামুন তার নির্দিষ্ট চুক্তিবদ্ধ হাসপাতালে পাঠাতেন। সেখান থেকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন পেতেন। এই পুলিশ কর্মকতা বলেন, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন বিদেশে পালিয়েছেন। আর দু’জন পলাতক। পলাতক ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২২ জনকে (দালাল) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ ফারুক মোল্লা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।