নষ্ট হচ্ছে ভবন-সরঞ্জাম, বাড়ছে চিকিৎসা সংকট

0

 

আমাদের দেশের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসককে নিজ কর্মক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। সেবার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। অভিযোগ আছে, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের এক-চতুর্থাংশকেও কর্মক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনসহ অনেক যন্ত্রপাতিই বিকল হয়ে থাকে। রোগীদের উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য এসব যন্ত্র কেনা হলেও তা থেকে রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ছুটতে হয় বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে, যেখানে বেশি টাকা খরচ করে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ঢাকার প্রায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিপুল সংখ্যক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বিকল কিংবা অব্যবহৃত পড়ে আছে নানা জটিলতার কারণে। আবার অনেক স্থানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই।
সম্প্রতি ঢাকার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবন উদ্বোধন করা হয় চার বছর আগে। আর সেই ভবন হস্তান্তর করা হয় প্রায় ৩ বছর পর। ৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেই ভবনে এখনও পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা পায়নি কোনো রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আসবাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে ওই ভবনে চিকিৎসাসেবা চালু করা যাচ্ছে না। পুরনো ভবনে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে, মাদারীপুর সদর হাসপাতালের নতুন ভবনটি তিন বছর ধরে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। সেখানে কোনো কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় ভেঙে যাচ্ছে ভবনের দরজা-জানালা। একই সঙ্গে ভবনের জন্য কেনা আসবাব ও কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। কিন্তু এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এমন অবস্থা দেশের জেলা, উপজেলায় বিরাজ করছে। যশোরে ১শ’ শয্যার বিশাল ভবনটি পড়ে আছে এক দশক। মেরামতের অভাবে ধ্বংস হচ্ছে সবকিছু। অথচ, বেডের অভবে রোগীদের ফ্লোরে থাকতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগী ভর্তি করা কষ্টকর হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মূলত দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি। চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতার কারণে অনেককে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে উচ্চমূল্যের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। আবার দালালের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে অনেককে।
আমরা মনে করি, কোথাও যখন নতুন ভবন থাকার পরও আসবাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া যায় না কিংবা ভবন ও যন্ত্রপাতি থাকার পরও অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে এবং রোগীরা সে সবের সুবিধা পায় না তখন স্বভাবতই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আমরা আশা করবো, মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।