তদন্ত হোক জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় কেন

0

 

গত মঙ্গলবার বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ বিদ্যুৎ্হীন হয়ে পড়েছিল। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে শুরু হয় এই বিপর্যয়। সাড়ে তিন ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৫টায় কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগ। রাত ১০টা পর্যন্ত ৫০ শতাংশ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয় বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়। অবশ্য ডিপিডিসি ও ডেসকো জানায়, এই সময়ের মধ্যে তারা ৮০ শতাংশ এলাকায় আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকা ছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় এক দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় বেশির ভাগ বহুতল ভবন ও বিপণিবিতানের জেনারেটরও তেলের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পাম্পগুলোতে তেলের জন্য মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অন্ধকারে থাকার পাশাপাশি শহরাঞ্চলে পানির সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুতের অভাবে বহু সিএনজি স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। সিএনজিচালিত বহু যানবাহনের চলাচল থেমে যায়। হাসপাতালগুলোতে জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যন্ত ব্যাহত হয়। রোগীদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। কিন্তু গ্রিড ব্যবস্থায় কেন এমন বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল তার সঠিক কারণ জানাতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। কারণ, অনুসন্ধানে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
সরকার দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে, দেশ এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এরপর ঘোষণা দিয়ে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা চালাচ্ছে লোডশেডিং। সমস্যা রয়েছে সঞ্চালন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়। ফলে, প্রায়ই নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এর আগেও জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটেছে। সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী একবার ঘটেছে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে। তখন ১০ ঘণ্টারও বেশি সারা দেশ বিদ্যুৎহীন ছিল। আরেকবার গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালের মে মাসে। তখনো দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩২টি জেলা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল। গত মাসেও জাতীয় গ্রিডের আরেকটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাটের কারণে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ্হীন থাকে। যান্ত্রিক বিষয়ে ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটতেই পারে। কিন্তু বার বার কেন ঘটছে তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে, মেরামত করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। বিপর্যয়ের কারণ যদি হয় রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা কিংবা সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়া তাহলে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। একই সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের নিরাপত্তায় আরো বেশি জোর দিতে হবে।
আমরা চাই, দ্রুত জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের রহস্য উদ্ঘাটন করা হোক। বিদ্যুৎ না থাকলে জনজীবনে কী ধরনের দুর্ভোগ হতে পারে দেশের মানুষ গত মঙ্গলবার তা আবারও প্রত্যক্ষ করেছে। এ ধরনের দুর্ভোগ যাতে জনজীবনে বারবার নেমে না আসে তার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে,স্বয়ং সম্পূর্ণ ঘোষণা দিলেই সমস্যার সমাধান হয় না। জনগণ বাস্তবে সব চায়।