গায়ের জোরে একক প্রার্থী বিপজ্জনক

0

নির্বাচনে যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকে, মানুষের ভোট দেওয়ার বা প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ না থাকে—তাহলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। নির্বাচনপ্রক্রিয়ার সৌন্দর্যহানি হয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সম্প্রতি দুই ধাপে যেসব ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার অনেকটিতেই বিনা ভোটে চেয়ারম্যান বা সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একই ধারা লক্ষ করা যাচ্ছে তৃতীয় ধাপের নির্বাচনপ্রক্রিয়ায়ও। এই ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গত মঙ্গলবার। জানা যায়, এদিন ২৭টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র বাছাই হবে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১১ নভেম্বর। ধারণা করা হচ্ছে, বাছাই ও প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থীর সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে এবং তাঁদের বিনা ভোটে নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে।
তৃতীয় ধাপে বিনা ভোটে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এই উপজেলার ১৪টি ইউপিতে শুধু চেয়ারম্যান প্রার্থীরাই নন, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য পদেও একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সাধারণ সদস্য পদ রয়েছে ১২৬টি এবং নারী সদস্য পদ রয়েছে ৪২টি। জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থীর সবাই ক্ষমতাসীন দলের। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার ছয়টি এবং হাটহাজারীর একটি ইউপিতেও চেয়ারম্যান পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর আগে প্রায় একই রকম অবস্থা দেখা গিয়েছিল কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়। সেখানকার পাঁচটি ইউপিতেও চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী ছিলেন এবং তাঁরা সবাই ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের। একইভাবে প্রথম ধাপে ৭২ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে ৮১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনেকেই একক প্রার্থিতার বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। তাঁরা মনে করছেন, প্রভাব খাটিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে বিরত রাখা হয়ে থাকতে পারে। একইভাবে অনেককে প্রার্থিতা প্রত্যাহারেও বাধ্য করা হতে পারে। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনকে বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখতে হবে। সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে সেসব ইউপির নির্বাচন স্থগিত করতে হবে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি যেসব ইউপিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল সেসব ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এ কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ইউপি নির্বাচনের প্রতিটি ধাপে সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশন বিব্রত বোধ করছে। তিনি এ জন্য মাঠ পর্যায়ে সহনশীলতার অভাবকেই দায়ী করেছেন। নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কমিশনকে সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। নির্বাচনে বল প্রয়োগ এবং অন্যকে দমিয়ে রাখার যেকোনো অপচেষ্টা কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতের নির্বাচনেও এসবের খারাপ প্রতিক্রিয়া হবে।