নিত্যপণ্যের দামের দাপটে চৌগাছায় কষ্ট বেড়েছে দরিদ্রের

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ অভাব নামক দানব বাসা বেঁধেছে চৌগাছার হত দরিদ্র মানুষের পরিবারে। দিনের পুরো সময় ধরে এমনকি রাতেও করছেন পরিশ্রম। তারপও সংসারের অভাবকে দূর করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানান সমাজের খেটে খাওয়া মানুষেরা। ঘরে ঘরে এই দূরাবস্থার জন্য সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীসহ সাধারণ মানুষ।
সারাদেশের মত যশোরের চৌগাছাতে দাম বাড়েনি এমন পণ্য এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কৃষকের কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে এখন আকাশ ছুঁই ছুঁই। যার প্রভাব পড়েছে প্রতিটি কৃষক পরিবারে। দাম বেড়েছে চাল,ডাল,চিনি,আটা,ময়দা,মাছ, গোশ,মুরগী,ডিম, দুধ,পোষাক, জামা কাপড় পরিস্কার করা ডিটারজেন্ট থেকে সাবান সোডা, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, শিক্ষা উপকরণ, খোলাধুলার সামগ্রী, শিশু খাদ্য একথায় সব কিছুরই দাম শুধু বাড়ছে তো বাড়ছেই। ভয়াবহ পরিস্থিতিতে খারাপ অবস্থায় আছে শহর ও শহরতলীর হত দরিদ্র পরিবারগুলো। সংসারের চাকা সচল রাখতে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে পরিবারের প্রধানকে পরিশ্রম কয়েকগুন বেশি করতে হচ্ছে। তারপরও দায় দেনায় তারা হাবুডুবু খাচ্ছেন। চাল ডালসহ দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো সম্ভব না হলে বেঁচে থাকায় যেন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে মনে করছেন অনেকে।
চৌগছা পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম ঘুরে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে তাদের কষ্টে চলা দিনগুলোর কথা জানা গেছে। পৌর এলাকার বাসিন্দা বিধবা নারী হারবানু বেগম (৬৫)। তিনি বলেন, বহু আগে স্বামী মারা গেছেন। পরের বাসা বাড়িতে কাজ করে দুই মেয়েকে নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছি। মেয়েরা বড় হয়েছে। তাদের অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন। বলেন,বয়সের ভারে এখন আর কাজ করতে পারিনা। তাই এক মেয়ের বাড়িতে থাকি। জামাই যে রোজগার করে তাতে সংসার চালাতে গিয়ে প্রতি মাসেই দেনায় জর্জরিত হচ্ছে। বাজারের সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের ব্যয় বেড়েছে, বেড়েছে সংসারের কষ্ট।
একটি সরকারী অফিসের অনিয়মিত কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্ত্রী এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। আগে যা রোজগার করেছি খেয়ে পরে চলেছি, কিন্তু এখন আর সেটি সম্ভব হচ্ছেনা। নিকট অত্মীয়র কাছে দেনা, ঋণ নিয়েছি এনজিও থেকে। দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে দেনার বোঝা, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি মাঠে কিছু জমি আছে বন্ধোক বা বিক্রি রেখে বিদেশ যাবো। তানা হলে দেনার বোঝা দিন যত যাবে ততই ভারি হয়ে উঠবে।
মাশিলা গ্রামের বিদেশ ফেরত ইয়ারজুল হোসেন বলেন, অভাব অনাটনের সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য পাড়ি জমাই বিদেশে কিন্তু সেখানে বেতন কম হওয়ায় পুনরায় ফিরে আসি বাড়িতে। পিতাহারা ইয়ারজুল হোসেন বৃদ্ধ মাকে নিয়ে দ্রব্যমূল্যের এই উর্দ্ধগতির বাজারে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন। কিভাবে বেঁচে থাকবেন আর কিভাবেই চলবে সংসার সেই চিন্তায় দিশেহারা।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় চৌগাছা উপজেলা বাসদের সদস্য সচিব আব্দুল মালেকের সাথে। তিনি বলেন, পুঁজিবাদ ব্যবসা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত দেশে ধনী আরও ধনী হবে আর গরিব হবে আরও গরিব। বর্তমান পরিস্থিতি জন্য তিনি সরকারকে দায়ী করেন।
বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট শেখ মাফিজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যেও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেছে। যার ফলশ্রুতিতে এক শ্রেণির মানুষ ক্রমেই বৃত্তবান হচ্ছেন আর ভোক্তার পকেট কাটা পড়ছে।