খাদ্য আমদানিতে নজরদারি থাকতে হবে

0

 

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সতর্ক্যবার্তা হচ্ছে, নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। বিশ্বব্যাপী খরা-বন্যা প্রভৃতি দুর্যোগে খাদ্যোৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে যেতে পারে বলেও আশংকা করা হয়। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্যের আমদানি-রফতানি ও চলাচল বাধাগ্রস্ত করেছে। এতে আমাদের দেশেও খাদ্যের দাম বেড়েছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের আমদানি-রফতানিও ব্যাহত হয়েছে। ফলে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামও বেড়েছে। কৃষিসহ সব ধরনের পণ্য উৎপাদন ও দামে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে খাদ্যের আকাল ও উচ্চদামের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংস্থা। বন্যা ও খরায় বাংলাদেশে বোরো উৎপাদন কম হয়েছে। বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। আমন উৎপাদনও কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাকিস্তানে নজিরবিহীন বন্যায় ফসলাদির ক্ষতিসহ মানবিক বিপর্যয় সীমা অতিক্রম করে গেছে। বলা হয়েছে, এই বন্যায় ৫০ বছর পিছিয়ে গেছে পাকিস্তান। বন্যা ও খরার শিকার হয়েছে ভারতও। তারও খাদ্যোৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চীনে খরার কারণে আবাদ-উৎপাদন মার খেয়েছে। এই সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে খাদ্য আমদানি ও বড় রকমের মজুত গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী এ মাসের শুরুতে মন্ত্রীসভার বৈঠকে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। সে নির্দেশনা কতটা প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ, তা সহজেই উপলদ্ধি করা যায়। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, অনেক আগেই এ নির্দেশনা আসা উচিত ছিল। তাহলে এতদিনে আমদানির আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে তা কার্যকর করা শুরু হয়ে যেতো। বিলম্বিত নির্দেশনা হলেও আমরা তা দ্রুত বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করি। আমরা মনে করি, যাতে বিলম্বের ক্ষতিটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব যদি আন্তরিকতা ও সততার সাথে আমদানি ও তদারকি হয়।
এদিকে, আমদানির প্রস্তুতি সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, সরকার এরমধ্যেই রাশিয়া, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে খাদ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একাধিক দেশ থেকে আমদানির সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত যৌক্তিক হয়েছে। আমদানির সম্ভাব্য উৎসসমূহ এ মুহূর্তে ব্যবহার করা খুবই জরুরি। কোনো কারণে কোনো দেশ রফতানি নাও করতে পারে বা কম করতে পারে, আবার কেউ মূল্য বাড়াতে পারে। সেজন্য বিকল্প দেশও থাকতে হবে। সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, সরকার রাশিয়া থেকে ৫ লাখ টন গম কিনছে। সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এই গম কেনার অনুমোদন দিয়েছে। ডিসেম্বর নাগাদ ওই গম দেশে আসবে। ভারত থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন চাল কেনার অনুমোদন এবং চুক্তিও হয়েছে। তবে এরই মাঝে ভারত ২০ ভাগ মূল্য বাড়িয়েছে। মিয়ানমার থেকে আতপ চাল কেনার চুক্তি হয়েছে তা অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি দাম হওয়ায় প্রশ্নও আপত্তি উঠেছে চুক্তি হয়েছে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সঙ্গেও। কোনো দেশের অপারগতায় যাতে অসুবিধা বা ঝামেলায় পড়তে না হয়, সে জন্য সজাগ থাকতে হবে। সম্ভব হলে অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করতে হবে। তবে যা কিছুই করা হোক তা সততা ও স্বচ্ছতার সাথে করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজনে কঠোর নজরদারি করতে হবে।