স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার উপায় নেই

0

বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস সত্যি হয়েছে। শীতের আবির্ভাব হতে না হতেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেছে এবং এতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে আরো ৩৫ জন। ভয়ঙ্কর বিষয় হলোÑ গত ৩ ডিসেম্বর থেকে প্রয় প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা ৩০ জনের উপরে থাকছে। এই প্রবণতার শিগগিরই অবসান হবে, এমন কোনো লণ নেই। এরই মধ্যে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা পাঁচ লাখ ছুঁঁই ছুঁঁই। মোট মৃতের সংখ্যা ছুঁঁয়েছে প্রায় সাত হাজার। এ পরিস্থিতিতে করোনার টিকা না আসা পর্যন্ত সংক্রমণ ঠেকাতে কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে ঘরের বাইরে গেলে মুখে মাস্ক পরতেই হবে। সরকারিভাবে তাই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাস্ক না পরলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানার কথা বলা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের কড়াকড়ি তেমন দেখা যাচ্ছে না। পথেঘাটে মানুষের মধ্যে এ ব্যাপারে দেখা যাচ্ছে চরম শৈথিল্য। এ েেত্র সাধারণ মানুষের সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সরকার দ্রুত করোনা শনাক্ত করতে প্রাথমিকভাবে দেশের ১০টি জেলায় গত শনিবার থেকে অ্যান্টিজেন পরীা শুরু করেছে। যেসব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীার সুযোগ নেই, সেসব জেলায় অ্যান্টিজেন পরীা চালু করা হলো। এই ১০ জেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে পুরো দেশে এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। বড় হাসপাতাল ও কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালেও অ্যান্টিজেন পরীা শুরু করা হবে বলে জানানো হয়েছে। অ্যান্টিজেন পরীায় কোনো ব্যক্তির যদি নেগেটিভ ফল আসে, তা হলে তাকে আবার আরটি-পিসিআর পরীা করা হবে। এতে পরীার ফলাফল নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বিশ্বজুড়ে করোনার এই ভয়াবহ তাণ্ডবের মধ্যে একটি বড় সুখবর বিশ্ববাসীকে কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করছে। সেটি হলো স্বল্পতম রেকর্ড সময়ে করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কার। যেকোনো ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার ও গণব্যবহার চালু হতে যেখানে দেড় বছর থেকে দুই বছর লাগত, সেখানে মাত্র ১০ মাসের মধ্যে বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাসের টিকা উপহার দিয়েছেন বিশ্ববাসীকে। আন্তর্জাতিকভাবে তিনটি টিকা নিয়ে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এর একটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের; অন্য দু’টি ফাইজার ও বায়োএনটেক এবং মডার্নার উদ্ভাবিত। এ ছাড়া চীন ও রাশিয়ার টিকাও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকার গত বুধবার ফাইজারের টিকার অনুমোদন দিয়েছে। রাশিয়া তাদের নিজস্ব টিকার গণব্যবহার শুরু করেছে গত শনিবার। যুক্তরাজ্য করেছে গতকাল মঙ্গলবার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, টিকা আসামাত্র করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে পুরোপুরি বিদায় হয়ে যাবে ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে এটি বিশ্ববাসীকে আশাবাদী করতেই পারে। এর বাস্তব একটি দিকও আছে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি। এর প্রত্যেকটি মানুষকেই টিকা দিতে হবে। সে কাজে সময় লাগতে পারে অন্তত চার বছর। সুতরাং এখনই পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ হয়তো আমরা পাবো না। আমাদের সামনে একটিই বিকল্প রয়েছে। আর সেটি হলো, ব্যক্তিগত সচেতনতা। অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।