অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চাই মূল্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান

0

 

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ রীতিমতো দিশাহারা। স্থির আয়ের মানুষের পক্ষে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে।
অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার এমন তথ্য উঠে এসেছে খোদ পুলিশেরই প্রতিবেদনে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে ১০ দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, বর্তমানে সড়ক-মহাসড়ক থেকে শুরু করে দোকানপাট, বাসাবাড়িতেও ডাকাতির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। অপহরণ ও জিম্মি করে অর্থ লুটের ঘটনা বাড়ছে। সাধারণ ডাকাতি-ছিনতাইয়ের পাশাপাশি বাড়ছে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা। সম্প্রতি ঢাকার একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে বিশেষ বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে দুর্বৃত্তরা এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরে ২০ লাখ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে কেরানীগঞ্জে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। এর কয়েক দিন আগে পুলিশ সদস্য পরিচয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে নির্জন স্থানে পৌঁছে তাঁর সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা কেড়ে নেয়। সৌভাগ্য যে, অপরাধটা অন্যদিকে যায়নি। আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাই দেশে এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণ। ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী খোদ রাজধানীতে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে চুরির ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ১৬৫টি। ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৮৫টি। এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ জন পুলিশ সদস্য। এ সময় অস্ত্র উদ্ধার ও মামলা হয়েছে ৪৫টি, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে ৪০টি। শুধু রাজধানীতে নয়, সারা দেশে ক্রমেই বাড়ছে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা। বাড়ছে আন্তঃজেলা ডাকাতদলের তৎপরতা। সেই সঙ্গে চলছে ইজিবাইক, অটো রিকশা, মোটরসাইকেল ছিনতাই। এসব ঘটনায় হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটছে। যশোরে পর পর দুটি হত্যাকান্ড ঘটেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ও ডিবি ঘটনায় জড়িতদের আটক করেছে। অভিযোগ আছে বিভিন্ন বাহিনীর পরিচয়ে অপরাধীরা ডাকাতির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে, পরিস্থিতি ক্রমেই আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও কর্মাভাব এই অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণ। সত্য যে, নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ কাজে কোনো ধরনের শৈথিল্য কাম্য নয়। আমরা আশা করি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার দ্রুত সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একই সাথে নিত্যপণ্যের মূল্যহ্রাস ও মানুষের কর্মসংস্থা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে।