লকডাউনে দুর্দিন শ্রমজীবীর ঘরে

0

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছিল দেশের মানুষের কাছে নতুন এক অভিজ্ঞতা। বৈশ্বিক এই মহামারি দেশের তো বটেই, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। রেমিট্যান্সের গতি শ্লথ হয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে দেখা দেয় স্থবিরতা। নতুন বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বেসরকারি কর্মজীবীদের একটি বড় অংশ কর্মহীন হয়ে পড়ে। অনেকে অর্ধেক বেতনে কোনোমতে টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশাপাশি শ্রমজীবীদেরও কাজের অভাব দেখা দেয়। বেসরকারি কর্মজীবীদের অনেকেই চাকরি হারিয়ে টিকে থাকার জন্য বিকল্প পেশা বেছে নিতে বাধ্য হন। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির উৎপাদন ব্যবস্থাপক রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে তরমুজ বিক্রি করছেন, এমন সচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে ঢাকার একটি দৈনিকে। একসময় গয়নার শোরুম ছিল এমন একজনের খবর প্রকাশিত হয়েছে একটি দৈনিকে। ব্যবসা হারিয়ে তিনি এখন দিনমজুর। কণ্ঠের জাদুতে মঞ্চ কাঁপাতেন, এমন শিল্পী আজ ঘরে বসে আছেন, উপার্জন নেই। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, করোনার বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের আদলে কঠোর বিধি-নিষেধে আছে দেশ। এরই মধ্যে কর্মক্ষেত্রে জনবল কমাতে বদলি শ্রমিক বাদ দেওয়া হয়েছে। দিনমজুররা ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না কাজের খোঁজে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় আয় নেই চালকসহ অন্যদের। দোকানপাট বন্ধ থাকায় অনেক বিক্রয়কর্মীর কাজ চলে গেছে। পণ্য বিক্রি করতে না পারায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর ব্যবসায় অচলাবস্থা চলছে।
গত বছর দেশে করোনার প্রকাপ শুরু হওয়ার পর ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। আবার সরকারও গত বছর বড় মাপের প্রণোদনা প্যাকেজ ও সহায়তার ঘোষণা দেয়। এবারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ‘লকডাউনের’ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে তিন বেলা খাবার জোটাতে হিমশিম খাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সরকারি-বেসরকারি সহায়তা বা প্রণোদনার খোঁজ মিলছে না। ফলে, প্রতিদিনের আয়ে যাদের সংসার চলে এমন মানুষের আয় কমে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষ বড় বিপাকে পড়েছে। শোনা যাচ্ছে- লকডাউনের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে এদের কী হবে ?
এখন এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষকে ঘরে রাখতে সর্বাত্মক সহায়তা দিতে হবে। দায়িত্বটা মূলত সরকারের। সুতরাং সবার আগে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে।