বেড়িবাঁধ ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের

0

 

খুলনা ব্যুরো॥ অব্যাহত বেড়িবাঁধ ভাঙনে খুলনার কয়রা উপজেলার সুন্দরবনঘেঁঁষা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলেছেন, আড়পাঙ্গাশিয়া, শাকবাড়িয়া ও কপোতাক্ষ নদ দ্বারা বেষ্টিত প্রায় বদ্বীপ ভূখণ্ড দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন। পাকা রাস্তাবিহীন (সমগ্র এলাকায় একটি পিচের রাস্তা নেই) অবহেলিত এ ভূ-খণ্ডে বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ লোনাপানিতে নিমজ্জিত। সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট চরামুখায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে।
বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীর পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে নদীশাসন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ ৭ দফা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভাঙন কবলিত এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থানীয় গোলখালী গ্রামের আশরাফুল ইসলাম নূর।
দাবিসমূহ হল- অবিলম্বে কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের তিন পাশের শাখবাড়িয়া ও আড়পাঙ্গাশিয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে নদীশাসন ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা, উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত সকল বেড়িবাঁধ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্তাবধানে নদীশাসন ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্তদের জলবায়ু ও পুনর্বাসন তহবিলে সরকারি বিশেষ বরাদ্দে গৃহনির্মাণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, সাতক্ষীরা পওর ১৩, ১৪/১ ও ১৪/২নং পোল্ডার খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও পাকাকরণ, স্কুল-মাদ্রাসা ও ক্ষতিগ্রস্ত ধর্মীয় উপাসনালয় মেরামত করা, প্রতিটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বরাদ্দ অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং প্রকল্পের সার্বিক বিবরণী টাঙানো বাধ্যতামূলক করা এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব চরম অবহেলা এবং আর্থিক অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগ উঠলে বিচার বিভাগীয় তদন্তসাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আড়পাঙ্গাশিয়া ও শাকবাড়িয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে বেষ্ঠিত প্রায় বদ্বীপ ভূখন্ড দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি। পাকা রাস্তাবিহীন (সমগ্র এলাকায় একটি পিচের রাস্তা নেই) অবহেলিত এ ভূখন্ডে বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ নোনাপানিতে নিমজ্জিত। সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট চরামুখায় কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তৃণ এলাকা তলিয়ে গেছে; এখনো চলছে জোয়ার-ভাটা। মাসখানেক আগেও একইস্থানে বেড়িবাঁধটির তিনশ’ মিটার দৈর্ঘ্যে ভেঙেছিল, যা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত করেছেন স্থানীয়রা। বেড়িবাঁধটি ভাঙনের পর প্রায় একমাস সময় পেলেও বিপুল জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় বেড়িবাঁধ সংস্কার বা মেরামতে এগিয়ে আসেনি নিষ্ঠুর সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন হওয়ায় সেই ষাটের দশক থেকেই বিমাতাস্বরূপ আচরণে টেকসই বেড়িবাঁধ নিরাপত্তা বঞ্চিত এলাকাবাসী। তাই অবিলম্বে নদীশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে ব-দ্বীপ ভূখন্ড দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অতিদ্রুত নদীশাসন ব্যবস্থা সহকারে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না গেলে, ‘বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে আমাদের জন্মস্থান প্রিয় দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকলেও শ শ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সুরক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। এসব বরাদ্দ কিভাবে আসে, আর কিভাবে যায়? তার কিছুই জানেন না উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত বিশাল জনগোষ্ঠী। তারা শুধু জানে- বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতেই বাঁধ রক্ষা করতে হয়; তা না হলে পানি তোড়ে ভেসে যাবে মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁইটুকুও। কখনোই, কোন বেড়িবাঁধ সংস্কার বা মেরামত স্থলে বেড়িবাঁধ প্রকল্প বিবরণী টাঙানো হয় না। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে গভীর যোগসাজশে স্বার্থন্বেষী ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিরা ‘ঘোলাজলে মাছ শিকার’ করে। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে তাই কতিপয় মানুষরূপী ‘সাপ-ব্যাঙ’ মনে-মনে খুশিই হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নটি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারাবে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মামুনুর রশীদ সোহেল, কবিরুল ইসলাম, আসমাউল হোসাইন সোহাগ, জামাল হোসেন, মাকসুদ আলম, ইমরান খান, আমীর হামজা, আলমগীর হোসেন মুন্না, আসাদুল ইসলাম ও সোহেল হোসেন প্রমুখ।