চৌগাছা হাসপাতালে বহুতল ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছার ৫০ শয্যা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ১শ শয্যায় উন্নীতকরণে ২২ কোটি টাকার কাজে নি¤œমানের ইট, রড ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে রোববার ঠিকাদারকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডেকে পাঠান। সেখানে ঠিকাদারের ভগ্নিপতি উপস্থিত হয়ে নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। উত্থাপিত অনিয়মের বিষয়ে তিনি সন্তোসজনক কোন জবাব দিতে না পারায় অনিয়ম খতিয়ে দেখতে উপজেলা প্রকৌশলীর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কাজের অনিয়ম ও নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার করার খবরটি সোশ্যালমিডিয়া ফেসবুক থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে জোর আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিরা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে জানানো হয় কোন অনিয়ম করা হয়নি। সিডিউলের দাম নির্ধারণের সাথে বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশি। ফলে এই কাজে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ২ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইরুফা সুলতানা জানান, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ভবন নির্মাণের কাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ আমার কাছে নানাভাবে অভিযোগ আসে। অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার শেখ অলিদুর রহমান হিরাকে উপজেলা পরিষদে আসতে বলি। কিন্তু ঠিকাদারের পরিবর্তে উপস্থিত হন ঠিকাদারের ভগ্নিপতি ইমরান হোসেন পাটোয়ারী। এ সময় তিনি জানান, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের কাজের দায়িত্বে তিনি রয়েছেন। নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, নি¤œমানের ইট, রড ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের কথা তাকে জানালে তিনি সন্তোসজনক কথা বলতে পারেন নি। সে কারণে উপজেলা প্রকৌশলী রিয়াসাত ইমতিয়াজের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা খোঁজ নিয়ে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি ১শ শয্যায় উন্নীত কল্পে বর্তমান সরকার প্রায় ২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করেন। ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দুটি ভবনের একটি ৬ তলা বিশিষ্ট ৫০ শয্যার জন্য অপরটি প্রশাসনিক ভবন। ইতোমধ্যে ৪৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মিয়া জানান।
সোমবার দুপুরে সরজমিনে দেখা গেছে, কর্মচারীরা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের নতুন ভবনে কাজ করছেন। কতজন এখানে কাজের সাথে যুক্ত জানতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন জানান ১শ ১৫ জন। ৬ তলা ভবনের প্রবেশ পথে দুই পাশের দেয়ালে নি¤œমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে তা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। ভবনের প্রবেশ পথ ধরে ভিতরে পশ্চিম ও পূর্ব পাশেও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় জানালার পাশে, সিড়িরকার্ণিশ ও ভিতরের বিভিন্ন দেয়াল নি¤œমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যান্য তলায়ও একই অবস্থা।
প্রতিটি সিড়ির নিচেয় পলেস্তারায় সঠিকভাবে বালি সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি তা সহজে অনুমেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা জানান, যেভাবে বলা হয়েছে সেভাবে আমরা করছি। কী পরিমাণ বালি বা সিমেন্ট দেয়া হচ্ছে সেটা তারা বলেনি। এছাড়া ৫ তলার ছাদের কাজে রডগুলো সঠিকভাবে দেয়া হচ্ছেনা। কত মিলি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটাও সংশ্লিষ্ঠরা কেউ বলেন নি।
মূল ভবনের পিছনে প্রশাসনিক ভবনেও নি¤œমানের ইট লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া নি¤œমানের ইট যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বলেন, ভবন নির্মাণে নি¤œমানের ইট ও অন্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। বারবার ঠিকাদারকে বলা সত্ত্বেও কোন কথা শুনিনি। কাজের এই অনিয়মের বিষয়ে আমি সিভিল সার্জন স্যারকে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে দায়িত্বে থাকা হিরা এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদারের ভগ্নিপতি ইমরান হোসেন পাটোয়ারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজারে নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেশি। ফলে এই কাজে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ২ কোটি টাকা লস হবে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে। তারপরও ইটের বিষয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে। ইউএনও ডেকেছিলেন। আমি বলেছি, নি¤œমানের ইট থাকলে সেটি সরিয়ে ফেলা হবে।