পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর মার্কিন ‘ভিসানীতির প্রভাব’ পর্যবেক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ আমেরিকার ভিসানীতি ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রভাবিত হয়েছে।
বিএনপির আন্দোলনে ‘ভিন্ন মাত্রা’ যোগ করেছে এই ভিসানীতি। গত কয়েক মাসে বিএনপি নেতারা বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশে সরকারকে ‘বিব্রত করতে’ একাধিকবার এই ভিসানীতির উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাদের পাল্টা কর্মসূচিতে বারবার বলে এসেছে যে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তারা।
স্বাভাবিকভাবে এই ভিসানীতি ঘোষণা বিএনপির আন্দোলনের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও প্রভাব ফেলেছে।
এ রকম পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ যেমন বিএনপির আন্দোলনের দিকে নজর রাখছে, তেমনি মাঠ প্রশাসনের ওপর এই ভিসানীতি কী রকম প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে।
‘এটা খুব একটা বড় সমস্যা না’ : আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, এ বিষয়কে ঘিরে পুলিশ-প্রশাসনের ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি এবং প্রশাসনের বিচলিত হওয়ারও কোনো কারণ নেই।
‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও সপ্তম নৌবহর এগিয়ে এসেছিল (বাংলাদেশের বিরুদ্ধে), তাতে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে কোনো অসুবিধা হয়নি,’ বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম।
তিনি মনে করেন, বিচার বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে নিজ নিজ জায়গা থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি তাদের কাজে বা নির্বাচনে কোনো ভূমিকা রাখবে না।
ভিসানীতির প্রয়োগ ও মার্কিন তৎপরতাকে আওয়ামী লীগ হালকাভাবে দেখাতে চাইলেও মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন।
আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন, আমলা ও বিচার বিভাগ – সবখানেই কানাঘুষা হচ্ছে বলে শোনা যায়।
নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি কোনদিকে যায়, সেটি নিয়েও নানা ধরনের জল্পনা আছে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার মধ্যেও।
এমন বাস্তবতায়, সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কৌশল নির্ধারণ ও ভবিষ্যৎ করণীয় কী হবে, সেটি নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে।
তবে সরকার এসব সমস্যার কথা মাথায় রেখেই যথাসময় নির্বাচন আয়োজন করার লক্ষ্যে এগুচ্ছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই নিজেদের নির্বাচনী কৌশল ঠিক করছে।
‘এটা খুব একটা বড় সমস্যা না। আমরা বাড়ি বাড়ি যাবো, আওয়ামী লীগের সাফল্যগুলো তুলে ধরবো। আমার বিশ্বাস মানুষ ভুল করবে না,’ বলেন এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্ব পাওয়া সাবেক আমলা কবির বিন আনোয়ার।
সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে?
বাংলাদেশে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ হয়েছিল বলে নির্বাচনের পর অভিযোগ তুলেছিল বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল, দেশী-বিদেশী গণমাধ্যম আর গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো।
এবারের নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাজনৈতিক দলের সদস্য ছাড়াও পুলিশ, প্রশাসন ও সরকারপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে বলে মানতে নারাজ সরকারপন্থীরা।
‘প্রশাসন একটি বিশাল রাষ্ট্রযন্ত্র। এই রাষ্ট্রযন্ত্রের ১০-১২ জন লোকের বিরুদ্ধে আমেরিকায় যাওয়ার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপিত হলে তা রাষ্ট্রে কিভাবে প্রভাব ফেলে, আমি তা বুঝতে পারি না,’ বলেন কবির বিন আনোয়ার।
নির্বাচন সামনে রেখে কৌশল কী?
নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশ থেকে দলের পক্ষে জনসমর্থন আদায় আর উন্নয়নের প্রচারকে গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আর বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলনের বিপরীতে দলের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য রাজপথ দখলে রাখার কৌশল অবলম্বন করছে তারা।
সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে গত কয়েক মাস ধরেই পথসভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচি দিচ্ছে বিএনপি। আওয়ামী লীগও নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতে ধারাবাহিকভাবে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আসছে গত কয়েক মাস ধরে।
আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে, এ রকম পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দলের প্রতি আস্থা ধরে রাখা যাবে। তাই আওয়ামী লীগের নেতারা ঘোষণা দিয়েই বিএনপির আন্দোলনের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। এ অবস্থায় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি জোরালো আন্দোলনের পথেই হাঁটছে।
অন্যদিকে, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও স্পষ্ট হচ্ছে।
এরকম অবস্থায় সংবিধান অনুযায়ী আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনীতি ও কূটনীতির দ্বিমুখি চ্যালেঞ্জের সামনে এখন আওয়ামী লীগ।
[সূত্র : বিবিসি]