বাজার সরবরাহ বদ্ধি ও তদারকি প্রয়োজন

0

 

চালের দাম কমাতে আমদানির অনুমতি কোনো কাজে আসছে না ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে আমদানি শুল্ক হ্রাসের জন্য আমদানিকারকরা অপেক্ষা করছেন। পত্রিকার খবরে জানা যায়, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার গত মাসে শুল্ক কমিয়ে ব্যবসায়ীদের চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছিল। মোট শুল্ক ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত চার দফায় ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক মাসেরও বেশি সময়ে চাল এসেছে সাড়ে চার হাজার টনেরও কম। ফলে আমদানির কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। চালের দাম ক্রমেই বাড়ছে। চিকন চাল, বিশেষ করে মিনিকেট ও নাজিরশাইল খোদ রাজনীতিতেমানভেদে এখন ৬৮ থেকে ৮৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণার কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, আটাশ ও পাইজাম চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে এত বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি দিয়ে লাভ কি হলো?
সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানিতে খুব একটা উৎসাহী নন। তাঁদের মতে, ভারতের বাজারে চালের দাম বেশি। তার ওপর ডলারের যে দাম তাতে আমদানি খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বাজারের বিদ্যমান দামের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। তাই চাল আমদানি করে লোকসানে পড়ার ভয়ে অনেকে চাল আমদানিতে ধীরে এগোচ্ছেন। তাঁরা সম্পূর্ণ শুল্ক তুলে দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছেন। সামান্য হলে অর্থ ভান্ডযারে বিরূপ প্রভাব পড়বে। একথা সবাই জানে যে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই কমছে। অর্থনীতিবিদরা নানা ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ৯ লাখ টন চাল আমদানি নিঃসন্দেহে রিজার্ভের ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করবে। তা সত্ত্বেও চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে সেটি করা যায়। কিন্তু কঠিন সময়ে বাজারে যদি তার কোনো প্রভাব না পড়ে, তাহলে এত বিপুল পরিমাণ আমদানির অনুমতি দিয়ে লাভ কী? বরং এ ধরনের অবাধ অনুমতি নানাভাবে মুদ্রাপাচারের সুযোগ করে দিতে পারে বলে অর্থনীতিবিদদের অনেকে আশঙ্কা করছেন। সংবাদ মাধ্যমের আরেক খবরে জানা যায়, গত ২২ জুন পর্যন্ত আগের অর্থবছরে ৯ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। তার মধ্যে ছয় লাখ ৮৩ হাজার টন আমদানি করা হয়েছে সরকারিভাবে। সরকার ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমেও অনেক চাল সংগ্রহ করেছে। অনেকেই মনে করেন, সঠিক উপায়ে এর একটা বড় অংশ এই ঊর্ধ্বগতির সময়ে বাজারে ছাড়া গেলে বাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকত। সরকার বিষয়টি ভাবতে পারে।
আমরা জানি, বাংলাদেশের বাজারে সিন্ডিকেট, মজুদদারিসহ অন্যান্য অসৎ উপায়ে ভোক্তার পকেট কাটার অপচেষ্টা অনেক পুরনো। এর বিরুদ্ধে বাজারে কার্যকর উপায়ে হস্তক্ষেপ করার মতো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে গড়ে ওঠেনি। ট্রাক সেল, ওপেন মার্কেট সেল বাজারে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। কার্ডের মাধ্যমে চাল বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এই দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজারে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। একদিকে সরবরাহ বৃদ্ধি, অন্যদিকে, মজুদদারির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সাময়িক সময়ের জন্যে হলেও সরকার তা পরীক্ষা করতে পারে।