নড়াইলের সেই শিক্ষক কোথায়?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ফেসবুকে ছাত্রের দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে লাঞ্ছনার শিকার নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কোথায় আছেন জানেন না স্ত্রী। ঘটনার দিন থানা থেকে আর বাড়িতে ফেরেননি তিনি। এতে পরিবারের সদস্যরা বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন। তবে পুলিশের দাবি, তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
অধ্যক্ষের স্ত্রী সোনালি দাস বলেন, ‘গত ১৮ জুন কলেজে অপ্রীতিকর ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটার পর আমার স্বামীকে সেফ কাস্টডিতে নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এরপর তিনি আর বাড়িতে ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। তিনি কোথায় আছেন আমরা জানি না।’
ঘটনার পর তারা কোনও ধরনের নিরাপত্তাহীনতা কিংবা হুমকিতে রয়েছেন কিনা– এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা রয়েছে। কেউ কোনও ধরনের হুমকি দেয়নি। তবে ঘটনার পর থেকে পুরো পরিবার সদস্যরা বিমর্ষ হয়ে পড়েছেন।’
তবে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় দাবি করেন, ‘ওই শিক্ষক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি।’
লাঞ্ছনার শিকার ওই শিক্ষক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কিনা তা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, আমার জানামতে তিনি (অধ্যক্ষ) নিরাপত্তাহীনতায় নেই। ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষের বড়কুলার গ্রামের বাড়িতে পুলিশ ডিউটি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘটনার দিন ১৮ জুন পুলিশের সামনে অধ্যক্ষকে লাঞ্চিত করা হয়নি বলেও দাবি করেন এসপি। যদিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে পুলিশি উপস্থিতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত হতে দেখা গেছে।
তবে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িতদের কোনও ছাড় দেওয়া হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করছে। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত প্রধান তিন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। আশাকরি দ্রুতই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে আমরা সক্ষম হবো।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আখতার হোসেন টিংকু বলেন, অধ্যক্ষ স্বপন স্যারকে বহিরাগত ও উশৃঙ্খল ছাত্র-জনতা অন্যায়ভাবে লাঞ্চিত করেছে। ওইদিন তাদের থামানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে বিরোধীপক্ষের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমদূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হিমায়েত হোসাইন ফারুক বলেন, লাঞ্ছনার শিকার অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের পরিবার পরিজনের খোঁজ আমি নিয়মিত রাখছি। আমি বলেছি যেকোনও সমস্যায় আমরা তাদের পাশে থাকবো।
এদিকে ঘটনার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রিয়াজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট অপর একটি কমিটিও কাজ করছে।
পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থী ফেসবুক আইডি থেকে ভারতের রাজনীতিবিদ নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে তার বিতর্কিত মন্তব্যকে সমর্থন জানান। পোস্ট দেওয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে ওই শিক্ষার্থী কলেজে আসেন। তখন তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বলেন। কিন্তু মোছেননি। পরে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জানান। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের শিক্ষকদের পরামর্শে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তারা কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। এরপর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। এ সময় ১০ জন আহত হন। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।