আইন করে পরিবারকে দায়বদ্ধ করা হোক

0

দেশে আবারো বেড়ে গেছে ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, ছাত্রী হয়রানী জাতীয় অপরাধ। কোনো একটি বিশেষ জেলা বা থানা নয়, দেশের সর্বত্র বাড়ছে এই ভয়ঙ্কর সামাজিক অপরাধ। গত এক সপ্তাহে যশোরাঞ্চলের পত্র-পত্রিকা দেখলে অন্তত দশটি ঘটনা মিলবে। লেবুতলায় ধর্ষণ, মনিরামপুরে শিক্ষক কর্তৃক স্কুলছাত্রীকে বিয়ে, ছাত্রীর শ্লীলতাহানি, ফুলতলা ও নড়াইলে ধর্ষণ, ঝিনাইদহ ও শালিখায় সম্ভ্রমহানীর খবর সমাজকে নাড়া দিচ্ছে ?
এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বখাটেনার যেসব খবর আসছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তোলে। স্কুল-কলেজগামী মেয়েরা বখাটেদের অত্যাচারের শিকার হচ্ছে। সর্বত্র কোমলমতি মেয়েদের শারীরিকভাবে আঘাত করা হচ্ছে প্রকাশ্যেই।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কক্সবাজারে বোরকা পরিহিত তরুণীকে খালি গায়ে আগলে রেখেছেন তাঁর ভাই। এক বখাটে গাছের ডাল জাতীয় কিছু দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করছে। তারপরও বোনকে আগলে রেখেছেন মারধরের শিকার যুবকটি। মাঝেমধ্যে যুবকটিকে লাথি মারছে হামলাকারী। পরে খালি গায়ে আরেক বখাটে এসে কিল-ঘুষি ও লাথি মারছে তরুণীকে আগলে রাখা যুবকের ওপর। ঘটনাস্থলে ঘোরাঘুরি করে তৃতীয় আরেক বখাটে সহায়তা করছিল হামলাকারীদের। পরে অবশ্য দুই বখাটেকে আটক করেছে পুলিশ।
পত্রিকায় প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে বখাটেদের উৎপাত বেড়েছে। গত এক মাসে অন্তত পাঁচটি অভিভাবকদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কায় ছাত্রীরাও এ নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। লিখিত অভিযোগও করতে পারছে না।
অপর এক খবরে বলা হয়েছে, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের জঙ্গলবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের চার শিক্ষিকাকে হেনন্তা করেছে বখাটেরা। শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় শিক্ষিকাদের ওপর বখাটেরা চড়াও হয়। এ ঘটনায় বখাটেদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। ঠিক এ রকমই প্রতিকারহীন একের পর এক ঘটনা ঘটেছে সারাদেশে। ঘটনাগুলো যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বখাটেদের দৌরাত্ম থেমে নেই। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে বের করা এখন একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। পারিবারিক ও সামজিক অনুশাসন ফিরিয়ে আনা, মূল্যবোধ নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা, এসব কথা অনেক বলা হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। কাজেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো কঠোর হতে হবে। বখাটেদের পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। পরিবারের কোনো সদস্য বকে গেলে তার দায়দায়িত্ব ওই পরিবারকেই বহন করতে হবে। এ জন্যে প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। পরিবার যদি শাস্তির আওতায় আসে তাহলে শৈশব থেকেই পারিবারিক শিক্ষা শুরু হবে এবং শেষ পর্যন্ত তা সমাজের কল্যাণে কাজে লাগবে।